আজিজার মৃত্যুর নেপথ্যে মোবাইলে অশ্লীল ভিডিও ধারণ?

নরসিংদীর স্কুলছাত্রী আজিজা খাতুন ‘হত্যার’ ঘটনা তদন্তে নতুন মোড় নিয়েছে। ঘটনাটি হত্যা না আত্মহত্যা, সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত নয় পুলিশ। এ জন্য ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে বুধবার নরসিংদী জেলা পুলিশের সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে।

মোবাইল চুরির অপবাদে কিশোরী আজিজাকে পুড়িয়ে মারার সংবাদ গত শনিবার গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর সারাদেশে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত আজিজার চাচি বিউটি বেগম, চাচির মা সানোয়ারা বেগম, দাদি তমুজা বেগম, প্রেমিক রোমান, তার বন্ধু সুজন ও রেজাউলকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

মামলার তদন্তের অগ্রগতি জানাতে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন জেলার পুলিশ সুপার আমেনা বেগম। তিনি জানান, মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং করে আজিজার প্রেমিক রোমান, তার বন্ধু সুজন ও রেজাউলকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

গ্রেফতার রোমান ও তার দুই বন্ধুর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার জানান, প্রেমিক রোমানের সঙ্গে দেখা করার জন্য আজিজা গত ২৭ অক্টোবর দুপুরে নরসিংদীর স্লুইসগেট এলাকায় যায়। এ সময় সেখানে রোমান ও তার বন্ধু সুজন অপেক্ষা করছিল। দেখা হওয়ার পর আজিজা রোমানকে জানায়, তার বিয়ে ঠিক হয়েছে; কিন্তু সে রাজি নয়। বাবার বাড়িতে ফিরতেও চায় না সে। তাই আপাতত মাস তিনেকের জন্য একটি ঘরভাড়া করে দেওয়ার জন্য রোমানকে অনুরোধ জানায় আজিজা। কিন্তু রোমান আজিজার কাছে থাকা পাঁচ হাজার টাকা ও তিনটি মোবাইল ফোনসেট দেখে সেগুলো কেড়ে নেওয়ার ফন্দি আঁটে। এ জন্য সে তার বন্ধু রেজাউল ও সুমনকে ফোন করে স্লুইসগেট এলাকায় নিয়ে আসে। তারা চারজন কিছুক্ষণের জন্য একটি রুম ভাড়া নিয়ে আজিজাকে সেখানে নিয়ে যায়। পরিকল্পনা অনুযায়ী রোমান আজিজার বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেয় এবং তার বন্ধু সুজন মোবাইলে সে দৃশ্য ভিডিও করে। পরে সেই অশ্লীল ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে আজিজার কাছে থাকা পাঁচ হাজার টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নেয় তারা।

এসপি আমেনা বেগম আরও জানান, এ ছাড়া আজিজার বড় ভাইকে ফোন করে এক লাখ টাকা দাবি করে তারা। আজিজার মা তাদের ২০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা বলে তাকে কোনো ক্ষতি না করার অনুরোধ জানান। পরে রাত ৮টার দিকে আজিজাকে তারা ছেড়ে দিলে সে সিএনজি অটোরিকশায় করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। পথে কুটিরবাজারে নেমে মিজানুর রহমানের দোকান থেকে এক লিটার কেরোসিন কেনে। এর কিছুক্ষণ পরই বাড়ি সংলগ্ন রবি ফরাজির বাগানে আজিজা দগ্ধ অবস্থায় চিৎকার করতে থাকলে আশেপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে সেখান থেকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে পরদিন ভোর ৫টায় আজিজার মৃত্যু হয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) হাসিবুল আলম, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (শিবপুর সার্কেল) রেজুয়ান আহমেদ, শিবপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দুজ্জামান ও ডিবির পরিদর্শক সাইদুর রহমান।

এদিকে শিবপুর থানার ওসি সৈয়দুজ্জামান জানান, এ ঘটনায় গ্রেফতার বিউটি বেগম ও তার মা ছানোয়ারা বেগমের দু’দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।