ছাত্রলীগ নেতা শাওন হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। চোরাচালানে বাঁধা ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি চোরাকারবারি সিন্ডিকেট শাওনকে হত্যা করে বলে জানায় পুলিশ।
এর আগে গত ২১ আগস্ট কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার সংচাইল এলাকার রাস্তার পাশ থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা টি.আলী কলেজ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আজমীর হোসেন শাওনের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। কুমিল্লা ডিবি পুলিশের একটি টিম গত বৃহস্পতিবার রাতে অভিযান চালিয়ে নারায়গণগঞ্জ থেকে রাসেল নামে একজন গ্রেপ্তার করে। রাসেল কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার ডালপা গ্রামের রবি ভূইয়ার পুত্র। গ্রেপ্তারের পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদে বের হয়ে আসে হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য ।
জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছাত্রলীগ নেতা আজমীর হোসেন শাওন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেপ্তার রাসেল শুক্রবার বিকেলে কুমিল্লার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বিপ্লব দেবনাথের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। জবানবন্দীতে সে জানায়, গত ২০ সেপ্টেম্বর রাতে আইন শৃংখলা বাহিনীর ভূয়া পরিচয়ে শাওনকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার পানিয়ারুপ বাস স্ট্যান্ড থেকে কালো গ্লাসের একটি মাইক্রোবাসে তুলে নেয়া হয়।
পরে হাত-পা বেঁধে গুলি করে হত্যার পর লাশ কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক সংলগ্ন সংচাইল এলাকায় রাস্তার পাশে ফেলে দেয়া হয়। শাওনকে বাড়ী থেকে বের করে আনতে শাওনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু রাসেলসহ ৩ বন্ধুকে ব্যবহার করা হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও কুমিল্লা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) এসআই শাহ কামাল আকন্দ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার পানিয়ারুপ গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আনোয়ার হোসেনের ছেলে আজমীর হোসেন শাওন। সে কসবা টি.আলী কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র এবং কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন।
স্থানীয় একটি চোরাকারবারী সিন্ডিকেটের ব্যবসায় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন শাওন। তাই তাকে হত্যার পরিকল্পনা নেয় ওই সিন্ডিকেটটি। চলতি বছরের গত ২০ সেপ্টেম্বর রাতে আইন-শৃংখলা বাহিনী পরিচয়ে কালো গ্লাসের একটি মাইক্রোবাসে তুলে নেয়া হয় শাওনকে।
পরদিন হাত-পা বাঁধা গুলিবিদ্ধ অবস্থায় জেলার দেবিদ্বার উপজেলার সংচাইল এলাকায় কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের রাস্তার পাশ থেকে তার লাশ উদ্ধার করে দেবিদ্বার থানা পুলিশ। ওই হত্যাকান্ডে সরাসরি অংশ নেয় ৪ ঘাতক। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন নিহত শাওনের বন্ধু রাসেল ভূইয়া। সে মুরাদনগর উপজেলার ডালপা গ্রামের রবি ভূইয়ার পুত্র।
যেভাবে হত্যার রহস্য বের হয়:
এদিকে এ হত্যার নেপথ্যে রয়েছে কারা রয়েছে এমন প্রশ্নই এলাকায় ঘুরপাক খায়। ওই হত্যাকাণ্ডের ছিল না কোন প্রত্যক্ষদর্শী। পরে পুলিশ সুপারের নির্দেশে স্পর্শকাতর এ মামলাটি কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) হস্তান্তর করে দেবিদ্বার থানা পুলিশ। মামলার দায়িত্বভার পেয়ে মামলার রহস্য উদঘাটনে মাঠে নামে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।
মোবাইল ফোনের সুত্র ধরে বৃহস্পতিবার রাতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ডিবির এসআই শাহ কামাল আকন্দের নেতৃত্বে ডিবি পুলিশের একটি টিম এ হত্যা সরাসরি অংশ নেয়া ঘাতক মো: রাসেলকে নারায়নগঞ্জ জেলার সিদ্দিরগঞ্জ উপজেলার সাইনবোর্ড এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। পরে রাতভর ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে বেড়িয়ে আসে ওই হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত রহস্য।
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) এসআই শাহ কামাল আকন্দ পিপিএম বলেন, মামলাটি ডিবিতে আসার পর পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় শাওনের আত্বীয়-স্বজন, এলাকার লোকজন, শাওনের মোবাইলসহ সন্দেহবাজনদের মোবাইল কল লিস্ট পর্যালোচনা এবং অনেকের সাথে কথা বলে মামলার রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছি। ঘাতক রাসেলকে নারায়নগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তারের পর আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়ে হত্যাকাণ্ডের বিবরণসহ অন্যান্য ঘাতকদের নাম প্রকাশ করেছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত অপর আসামীদের গ্রেপ্তার ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধারসহ নেপথ্যের নায়কদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছেন তিনি।