বৃষ্টি বর্ষায় ত্বকের সমস্যা

বর্ষাকালে স্যাঁতসেঁতে ও ভেজা আবহাওয়ার কারণে ত্বক বা ত্বকের খোসপাঁচড়া, ফাঙ্গাল ইনফেকশন, প্যারনাইকিয়া, স্ক্যাবিস জাতীয় নানা ধরনের ত্বকের অসুখ হয়ে থাকে৷ ভেজা শরীর ভালোভাবে না মুছলে, কাপড় ভালোভাবে না শুকিয়ে গায়ে দিলে, রোদ না থাকায় স্যাঁতসেঁতে ঘর ইত্যাদি কারণে বর্ষাকালে ত্বকের বেশ কিছু অসুখ হয়৷
এই সময়ে যে কটি চর্মরোগ সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, তার মধ্যে ঘামাচির পরই ছত্রাকজনিত চর্মরোগ অন্যতম। কারণ, এই সময়ে হঠাৎ গরম ও ঠান্ডার তারতম্যে শরীর ভেজা থাকে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চর্ম ও যৌন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক রাশেদ মো. খান বলেন, যাদের ওজন বেশি, ঘামে বেশি এবং স্বাস্থ্য ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে ততটা সচেতন নয়, তাদেরই এই রোগগুলো বেশি হতে দেখা যায়।

কী কী ধরনের ছত্রাক রোগ এই সময়ে হতে পারে
মূলত তিনটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। যেমন: ১. দাদ ২. ছুলি ও ৩. ক্যানডিডিয়াসিস।
দাদ দেহের যেকোনো স্থানে দেখা দিতে পারে। তবে দেখা গেছে, সাধারণত তলপেট, পেট, কোমর, পাছা, পিঠ, মাথা, কুঁচকি ইত্যাদি স্থানে বেশি আক্রান্ত হয়।
টিনিয়া ভারছিকলার বা ছুলিও একটি ছত্রাকজনিত রোগ। গরমকালে এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়, শীতকালে আবার এমনিতেই যেন মিলিয়ে যায়। আবার গরম এলে ঘাড়ের চামড়া ভিজে থাকে। সেখানেই সাধারণত বেশি হয়ে থাকে। যা দেখতে হালকা বাদামি, সাদা গোলাকৃতির মতো দেখা যায়। বুকে, গলার দুপাশে, ঘাড়ের পেছনে, পিঠে, বগলের নিচে, এমনকি সারা শরীরে হতে পারে। এতে ত্বক দেখতে সাদা হয়। তাই অনেকেই আবার একে শ্বেতী ভাবতেও শুরু করেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে শ্বেতীর সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।
ক্যানডিডিয়াসিসও একটি ছত্রাকজনিত চর্মরোগ। যাঁদের শরীরে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, যেমন শিশু বৃদ্ধ কিংবা রোগাক্রান্ত, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, দীর্ঘদিন ধরে যাঁরা স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করেছেন কিংবা যাঁদের ত্বকের ভাঁজ পানিতে অথবা ঘামে সব সময় ভেজা থাকে, তাঁদেরই এই রোগ বেশি হয়। যাঁরা সব সময় পানি নড়াচড়া করেন, তাঁদের আঙুলের ফাঁকে, হাতের ভাঁজে, শিশুদের জিহ্বা, মহিলাদের যোনিপথে এবং গর্ভবতী নারীরা এতে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন। এতে ত্বকের আক্রান্ত স্থান একটু লালচে ধরনের দেখা যায় এবং সঙ্গে প্রচুর চুলকানি হয়ে থাকে।

ছত্রাক থেকে দূরে থাকা যায় কীভাবে
ত্বকে ফাঙ্গাস বেড়ে ওঠার পরিবেশ সৃষ্টি হলে সেখানে ফাঙ্গাস বেড়ে উঠতে চেষ্টা করবে। তাই ফাঙ্গাস প্রতিরোধে যেসব ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে সেগুলো হচ্ছে পা, আঙুলের ফাঁক, যৌনাঙ্গ ও এর পাশের ত্বক, নখের গোড়া ভালো করে সাবান দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। আর ত্বক পরিষ্কার বা ধোয়ার পর শুষ্ক টাওয়েল দিয়ে ভেজা স্থান মুছে শুষ্ক করে ফেলতে হবে। বিশেষ করে আঙুলের ফাঁক, ঊরুসন্ধির ভাঁজ, বগল, ঘাড়, মাথার চুল ইত্যাদি পুরোপুরি শুকনো না করলে সেখানে ফাঙ্গাস বেড়ে উঠতে পারে।

ত্বকের ছোঁয়াচে রোগ
স্ক্যাবিস বা খোসপাঁচড়া ত্বকের একটি ছোঁয়াচে রোগ। যে কেউ যেকোনো সময় এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। বর্ষাকালে এর প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়। একজন আক্রান্ত হলে পুরো পরিবার এমনকি ঘনবসতিপূর্ণ ঘরে একত্রে বসবাস করলে তাদের মধ্যে যে কেউ এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। চুলকানি হলো প্রধান উপসর্গ আর রাতে সেই চুলকানি কয়েক গুণ বেড়ে যায়। এমনকি ক্ষতের সৃষ্টি হয়ে ঘা হতে পারে।

কীভাবে ছড়ায়
অপরিচ্ছন্ন জীবনযাপন, এই রোগে আক্রান্ত রোগীর সঙ্গে একসঙ্গে বিছানায় শুইলে কিংবা ব্যবহারকৃত কাপড় অন্য কেউ ব্যবহার করলে খুব সহজেই এ রোগ ছড়াতে পারে। কারণ, জীবাণুটি ব্যবহৃত কাপড়ের মধ্যে দুই দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। শিশু-কিশোরেরাই এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে।
অন্যান্য রোগও কম–বেশি হয়ে থাকে। তবে কিছু সাধারণ নিয়মকানুন যেমন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, নিয়মিত গোসল ইত্যাদি মেনে চললে এসব রোগ থেকে রেহাই পাওয়া যেতে পারে।

এই সময়ের সচেতনতা
 এ সময় ভারী জামাকাপড় না পরে হালকা রঙের সুতি পাতলা জামা পরুন। ঘামে ভিজে গেলে দ্রুত পাল্টে নিন। ভেজা কাপড় পরে থাকলে ছত্রাক সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি।
 নিয়মিত প্রয়োজনে দিনে দুবার গোসল করুন। জীবাণুনাশক সাবান ব্যবহার করতে পারেন। ঘামে বা বৃষ্টিতে ভিজলে ত্বক ধুয়ে শুকিয়ে নিন।
 এ সময় সারা দিন জুতা-মোজা না পরে বরং খোলা স্যান্ডেল পরা ভালো। তবে খালি পায়ে হাঁটবেন না। রাস্তায় এখন যত্রতত্র নোংরা পানি জমে আছে। পায়ের ত্বককে এই নোংরা পানি থেকে বাঁচিয়ে রাখুন। কেননা এই পানিতে রয়েছে হাজার রকমের জীবাণু।
 ভেজা চুল ভালো করে শুকিয়ে নিয়ে তবে বাঁধবেন, নইলে মাথার ত্বকে সমস্যা হতে পারে।
 বাড়িতে কারও ছত্রাক সংক্রমণ হয়ে থাকলে শিশুদের তার কাছ থেকে দূরে রাখুন।
 বর্ষার ফল খেতে হবে। বেল, কলা, পেয়ারা, শসা, টমেটো, গাজর, পাতিলেবু ও জাম্বুরা ত্বকে এনে দেয় প্রাণ।