‘বিভিন্ন গণমাধ্যমে লেখা হয়েছে, আমার সঙ্গে রাফসানের প্রেম ছিল। কিন্তু এটা একেবারেই ভুল কথা। রাফসানের সঙ্গে তিন মাসের পরিচয়ে আমার বিয়ে হয়। এমনকি রাফসান আমার ভালো বন্ধুও ছিল না। আমার সঙ্গে অন্য আরেকজনের সম্পর্ক ছিল। তাঁর সঙ্গে ব্রেকআপের পর অনেক প্রস্তাব আমার কাছে এসেছিল। এর মধ্যে রাফসানও দিয়েছিল। তবে অন্যদের থেকে রাফসানের পার্থক্য ছিল এটাই, রাফসানের মা আমাকে তাঁর ছেলেকে বিয়ে করার জন্য খুব করে বলেছিলেন। আমিও তখন রাজি হই।’ কথাগুলো বলছিলেন মডেল-অভিনেত্রী অর্চিতা স্পর্শীয়া।
গতকাল রোববার দিবাগত রাতে বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকায় স্পর্শীয়া ও রাফসান আহসানের বিবাহবিচ্ছেদের খবর প্রকাশিত হয়। খবরে রাফসানের মন্তব্য থাকলেও ছিল না স্পর্শীয়ার কোনো কথা। কিন্তু কেন? উত্তরে স্পর্শীয়া বললেন, ‘বিচ্ছেদের খবর নিয়ে একেবারে আমি চিন্তিত নই। আমরা কিন্তু অনেক দিন ধরে আলাদা থাকছি। বিচ্ছেদের কথাও অনেক দিন আগেই আমরা ভেবেছি। তবে হ্যাঁ, আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে গত মাসে।’
স্পর্শীয়া আরো জানান, বিচ্ছেদের খবর নাকি তিনি আর রাফসান মিলে একসঙ্গে গণমাধ্যমে জানাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার আগেই রাফসান সাংবাদিকদের বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে স্পর্শীয়া বলেন, ‘আমি সাধারণ কেউ হলে আমার বিয়ে কিংবা বিচ্ছেদ নিয়ে কারো কৌতূহল থাকত না। যেহেতু আমি একজন অভিনেত্রী, দর্শকদের আমার ব্যক্তিগত বিষয়ে সত্য খবর জানার অধিকার আছে। আমি দায়িত্ববোধ থেকে সবাইকে বিচ্ছেদের খবর জানাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমার সঙ্গে কোনো আলোচনা না করে রাফসান অনেক মন্তব্য করেছে।’
বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত কেন নিলেন—জানতে চাইলে স্পর্শীয়া বলেন, ‘কারণটা আমিও জানাতে চাই। আমাদের দেশের মেয়েরা অকারণে বিচ্ছেদ চায় না। সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা আমার জন্য অনেক কঠিন হয়ে উঠেছিল। এ কারণে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি যে কারণেই রাফসানকে বিয়ে করি না কেন, বিয়ের পর কিন্তু ভালোভাবে ঘর করতে চেয়েছিলাম। আমি অন্য মেয়েদের মতো চেয়েছিলাম, আমার নতুন জীবন হোক। নতুন সংসার হোক। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। রাফসানও তাঁর জায়গা থেকে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিল। এটা আমি অস্বীকার করব না। কিন্তু আমাদের একসঙ্গে থাকা আর সম্ভব হয়নি। গত বছর অক্টোবরে আমাদের বিয়ের এক বছর পূর্ণ হয়েছিল। এর এক মাস পরে নভেম্বরে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, আমি রাফসানকে ডিভোর্স দেবো। এটা নতুন কিছু নয়। অনেক পুরাতন খবর। হঠাৎ করেই মিডিয়ায় এত খবর কেন প্রকাশ হচ্ছে, আমি বুঝতে পারছি না।’
স্পর্শীয়া যোগ করেন, ‘কিছু গণমাধ্যমে রাফসান বলেছে, আমাদের সম্পর্কে তৃতীয় ব্যক্তি ঢুকে পড়েছিল। তৃতীয় ব্যক্তি বলতে সে হয়তো আমার মাকে বোঝাতে চেয়েছে। বিষয়টা আমি পরিষ্কার করে বলছি। রাফসানকে অনেকে নির্মাতা বলে। কিন্তু আপনি খেয়াল করে দেখেন, রাফসানের কয়টা কাজ পর্দায় দর্শক দেখতে পেয়েছে। আমাদের বিয়ের পর থেকেই আমি আমাদের বাসায় ছিলাম। রাফসানও আমাদের বাসায় থাকত। বিয়ের পর খেয়াল করলাম, রাফসান কাজের প্রতি অনেক উদাসীন। অনেক অলস। আমি সংসার চালাতাম। আমাদের সমাজে বিয়ের পর স্বামী ও স্ত্রী দুজন মিলেই কিন্তু সংসারের হাল ধরে। আপনি বলেন, এটা কোন মেয়ের মা মেনে নেবে? আমার মা চাইতেন, রাফসান কাজ করুক। সব মেয়ের মা তাই চাইবেন।’
স্পর্শীয়া আরো বলেন, ‘রাফসানকে কাজের প্রতি আমি অনেক মনোযোগী করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছি। রাফসান কী যেন কী করে! ঘুরে বেড়ায়। এটা তো মাসের পর মাস হচ্ছিল। আমি সবকিছু মেনে নিয়েও থাকতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আর সম্ভব হলো না। আমার পরিবারে আমার মা আছেন শুধু। কিন্তু সেই মাকে রাফসান সম্মান দেখাতে পারেনি। অনেক সময় আমাদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেছে রাফসান। যা হোক, শেষ পর্যন্ত আমি বিচ্ছেদ চেয়েছি। সেটা এখন হয়েছে। আমি এখন ভালো আছি। আমি চাই রাফসানও ভালো থাকুক।’
আগামী দিনে কীভাবে পথ চলতে চান—জানতে চাইলে স্পর্শীয়া বলেন, “নাটক এখন আমি খুব কম করছি। ভালো গল্প ছাড়া কাজ করছি না। গেল ঈদে ‘শ্যাওলা’ নাটকটির প্রশংসা সব জায়গা থেকে পেয়েছি। শ্যাওলা নাটকের চিত্রনাট্য এককথায় অসাধারণ। এ ধরনের ভালো চিত্রনাট্য পেলে কাজ করব। আমি এখন চলচ্চিত্রে কাজ করতে বেশি আগ্রহী। কিছুদিন পরে ‘বন্ধন’ ছবির বাকি শুটিংয়ের কাজ শুরু করব।”
মিউজিক ভিডিও ও ওয়েব সিরিজগুলোতে আর কাজ করবেন না বলে জানালেন স্পর্শীয়া। বললেন, ‘আমি এমনটাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কম কাজ করব, কিন্তু ভালো মানের। এর বাইরে ওয়ার্ল্ড ট্যুর দিতে চাই আমি। পৃথিবীর সব দেশ ঘুরতে চাই। প্রতি মাসে ঘোরার পরিকল্পনা করেছি। শেষবার আন্দামান ও কলকাতার অনেক জায়গায় ঘুরেছি। এরপর গোয়া, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ডে যাওয়ার পরিকল্পনা করছি।’
২০১৫ সালের ১ অক্টোবর স্পর্শীয়ার সঙ্গে রাফসান আহসানের বিয়ে হয়। পারিবারিকভাবে তাঁদের বিয়ে হয়েছিল। একটি অনলাইনের শপের বিজ্ঞাপন নির্মাণের সময় রাফসানের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল বলে জানান স্পর্শীয়া।