‘ব্লু হোয়েল’ দ্যা সুইসাইড গেম

আমরা সবাই অনলাইন গেমের সাথে কম বেশি পরিচিত। ‘ব্লু হোয়েল’ তেমনি একটি অনলাইন গেম কিন্তু আর দশটি অনলাইন গেমের মত নয় এই গেমটি। এটি একটি বিপদজনক ডার্ক ওয়েব গেম যার গেম ওভার হয় মৃত্যু বা আত্মহত্যার মাধ্যমে। আর এটি এমনই একটি গেম যা আপনি অ্যাপ স্টোরে, প্লে স্টোরে খুঁজে পাবেন না। এটি আপনি খুঁজে পেতে পারেন ডার্ক ওয়েবের বিশেষ কোন লিংকের মাধ্যমে। এটা একটি অনলাইন ভিত্তিক সুইসাইড গেম। অর্থাৎ এই গেমটি খেললে আপনার মৃত্যু অনিবার্য। অনেকেই হয়ত বুঝতে পারছেন না একটি গেমের মাধ্যমে কিভাবে একজন মানুষের মৃত্যু ঘটতে পারে। আসুন বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করা যাক-

ব্লু হোয়েল গেমের উৎপত্তিঃ
_________________________________________________
ব্লু হোয়েল এর আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে নীল তিমি। আপনারা হয়ত জেনে থাকবেন যে- নীল তিমি পৃথিবীর সবথেকে বড় প্রাণী, যারা প্রায় ১০০ ফুট লম্বা আর ওজন প্রায় ১.৪ লক্ষ কিলোগ্রাম। এই দানবীয় প্রাণী কখনও কখনও এমন এমন কাণ্ড ঘটায় যার কোনও ব্যাখ্যা জীববিজ্ঞানীরা এখনও দিতে পারেননি। বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীর নানা দেশে সমুদ্র সৈকতে প্রমাণ আয়তনের নীল তিমির মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছে। যে প্রাণী সমুদ্রের গভীর জলে থাকে, সে কেন জল ছেড়ে এভাবে ডাঙায় উঠে আসে তার এক আশ্চর্য ব্যাখ্যা দিয়েছেন কিছু গবেষক এক কথায় স্বেচ্ছা মৃত্যু বা আত্মহত্যা। আর এ কারণেই নীল তিমির আত্মহত্যাকে মূল আদর্শে রেখে গেমটির নাম রাখা হয়েছে ব্লু হোয়েল।


এফ ফিফটি সেভেন নামক একটি রাশিয়ান হ্যাকার টিম গেমটি তৈরি করে। আর এর উদ্ভাবক ২২ বছরের ফিলিপ বুদেকিন। সে রাশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাইকোলজির ছাত্র ছিল। পরবর্তীতে বুদেকিনকে সেই প্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কারের পরে গেমটি তৈরি করার জন্য সে মনোনিবেশ করে এবং ২০১৩ সালে গেমটি তৈরি করে।
রাশিয়ার আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এই গেমটি তৈরির জন্য বুদেকিনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পরে শৃঙ্খলা বাহিনীর তীব্র জেরায় এই গেম চালানোর কথা স্বীকারও করে নেয় ফিলিপ। কিন্তু সে এইসব মৃত্যুর দায় নিতে অস্বীকার করে। সে কোনোভাবেই তার এই অনলাইন গেমকে অপরাধ বলে মানতে রাজি নন। সে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে জবানবন্দি দেয়- ‘সমাজে যারা হতাশাগ্রস্থ বা মানসিক ভাবে বিকারগ্রস্থ মানুষ তাদের বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই,তারা সমাজের বোঝা। তাই সে এই বোঝা পরিস্কার করার দায়িত্ব নিয়েছে’
২০১৩ সালে রাশিয়ায় প্রথম এই গেমের সূত্রপাত হয়। কিন্তু ২০১৫ সালের আগে গেমটি ততটা বিকাশ লাভ করেনি এবং ২০১৫ সালে VK ডট কম নামক একটি সোশ্যাল মিডিয়ায় গেমটি প্রথম ভাইরাল হয় ও প্রচুর পরিমাণে ডাউনলোড হয়।

ব্লু হোয়েলের কারণে যত মৃত্যুঃ
_________________________________________________
সাম্প্রতিককালে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে একাধিক দুর্ঘটনা এবং আত্মহত্যার ঘটনায় নাম জড়িয়েছে ‘ব্লু হোয়েল’ নামের এই সোশ্যাল গেমিং-এর। এক পরিসংখ্যানগত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায় যে, গত কয়েক মাসের ব্যবধানে রাশিয়া এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় মোট ১৬ জন তরুণী আত্মহত্যা করেছেন। এতো কম সময়ের মধ্যে এত জন অল্পবয়সী মেয়ের আত্মহত্যার ঘটনা বিস্মিত করেছিল পুলিশকেও। এদের মধ্যে সাইবেরিয়ার দুই স্কুলছাত্রী য়ুলিয়া কনস্তান্তিনোভা (১৬) এবং ভেরোনিকা ভলকোভা (১৫) একটি বহুতলের ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে বলে পুলিশ রিপোর্ট থেকে জানা যায়। তদন্তকারী অফিসারদের তখন মনে হয়েছিল, এই সমস্ত আত্মহনন হয়তো বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা নয়, হয়তো কোনও গোপন যোগসূত্র রয়েছে এদের মধ্যে।

আত্মহত্যার পূর্বে য়ুলিয়া কনস্তান্তিনোভা নামক মেয়েটি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি নীল তিমির ছবি আপলোড দিয়ে লিখেছিল- ‘দ্যা এন্ড’ এবং তার বোন ভেরোনিকা ভলকোভা লিখেছিল- ‘দ্যা সেন্স ইজ লস্ট’।

রাশিয়ায় এ পর্যন্ত ১৩০ জন ও রাশিয়ার বাহিরে ৫০ জন ছেলেমেয়ে এই গেমের কারণে মৃত্যুবরণ করেছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশে অপূর্বা বর্ধন স্বর্ণা নামক এক কিশোরী আত্মহত্যা করেছে। রাজধানী ঢাকার ধানমণ্ডির সেন্ট্রাল রোডের ৪৪ নম্বর বাসার ৫বি ফ্ল্যাটের বাসা থেকে গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে স্বর্ণার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়।  এর পর থেকেই তার পরিবারের সন্দেহ যে তাদের মেয়ে সোশ্যাল মিডিয়ানির্ভর  ‘ব্লু হোয়েল’  গেমে আসক্ত হয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।

স্বর্ণার লাশ যে ঘর থেকে পাওয়া যায়, সেই ঘরে তার পড়ার টেবিলের ওপর একটি সুইসাইড নোট পাওয়া গেছে, যা স্বর্ণা মারা যাওয়ার আগে লিখে গেছে বলে তার বাবা আইনজীবী সুব্রত বর্ধন জানিয়েছেন।

সুইসাইড নোটে বড় বড় করে লিখা আছে, ‘NO ONE IS RESPONSIBLE FOR MY DEATH’, অর্থাৎ আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। আর এই লেখাটির ঠিক পাশেই ছিল একটি হাসির চিহ্ন আঁকা, যা থেকে দেখা যায় যে এটি ব্লু হোয়েল গেমসের ৫০ নম্বর ধাপ।

 

কিভাবে কাজ করে এই গেমঃ
_________________________________________________
এই গেমটি এমন এক উপায়ে তৈরি করা যাতে এই গেমটি একবার ইন্সটল করলে আর আনইন্সটল করা যায় না এবং গেমটি গেমারের মোবাইল ফোনের সিস্টেমের ভিতর সেট হয়ে যায়। যার ফলে গেমারের সকল তথ্যাদি- কন্টাক্ট নাম্বার,ফেসবুকের পাসওয়ার্ড,জিমেইলের পাসওয়ার্ড,ফেসবুকের ইমেইল,আইপি এড্রেস,ফোন গ্যালারির ফটো,ব্যাংকের তথ্যাদি,লোকেশন ট্রেস সহ ইত্যাদি এই গেম এর অ্যাডমিন বা কন্ট্রোলার এর কাছে চলে যায়। যার মাধ্যমে পরবর্তীতে গেমের অ্যাডমিন গেমারকে নিয়ন্ত্রণ করে বিভিন্ন হুমকি,ব্ল্যাকমেইলিং ও সম্মোহনের মাধ্যমে।
ব্লু হোয়েল গেমটি যখন কেউ ওপেন করে তখন সেই ইউজার বা ব্যবহারকারীকে নিয়ন্ত্রণ করে বা নির্দেশনা দেয় একজন অ্যাডমিন। যাকে হোয়েল নামেও ডাকা হয়।
গেমটি খেলা শুরু করার পূর্বেই অ্যাডমিন ব্যবহারকারীকে বলে দেয় – ‘গেমটি খেলা শুরু করলে আর বের হতে পারবে না এবং এর ফলাফল হতে পারে মৃত্যু। তুমি কি গেমটি খেলতে চাও ? যদি শুরু করতে চাও তবে ইয়েস লিখ আর যদি খেলতে না চাও তবে এখনি বের হয়ে যাও’। সাধারণত এক্ষেত্রে ব্যবহারকারী বা গেমার চিন্তা করে একটা সাধারণ গেমসইতো খেলছি এতে কিভাবে আমার মৃত্যু ঘটতে পারে এবং এই চিন্তা করে সে ইয়েস লিখে দেয়। যার মাধ্যমে সে পা দিয়ে ফেলে এক ভয়ংকর মৃত্যুফাঁদে।

 

অনলাইন ভিত্তিক এই গেমটি একটি কমিউনিটির মাধ্যমে পরিচালিত হয়। আর কমিউনিটির মাধ্যমেই চলে প্রতিযোগিতা।

এই গেমসের মোট ৫০টি ধাপ রয়েছে। আর ধাপগুলো খেলার জন্য ঐ কমিউনিটির অ্যাডমিন খেলতে ইচ্ছুক ব্যক্তিকে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ দেয়।

গেমারকে সে চ্যালেঞ্জ পূরণ করে তার ছবি আপলোড করতে বলা হয়। শুরুতে মোটামুটি সহজ এবং কিছুটা চ্যালেঞ্জিং কাজ দেয়া হয়। যেমন: মধ্যরাতে ভূতের সিনেমা দেখা। খুব সকালে ছাদের কিনারা দিয়ে হাঁটা এবং ব্লেড দিয়ে হাতে তিমির ছবি আঁকা ইত্যাদি। তবে ধাপ বাড়ার সাথে সাথে কঠিন ও মারাত্মক সব চ্যালেঞ্জ দেয় অ্যাডমিন। যেগুলো অত্যন্ত ভয়াবহ এবং এ খেলার সর্বশেষ ধাপ হলো আত্মহত্যা করা। অর্থাৎ গেম শেষ করতে হলে গেমারকে আত্মহত্যা করতে হবে।

এ গেমসের প্রথম দশটি ধাপ মোটামুটি সহজ ও কিছুটা চ্যালেঞ্জিং। প্রথম দশটি ধাপের মাধ্যমে গেমারকে গেমটির প্রতি আকর্ষিত করা হয়। এই আকর্ষিত করার অন্তরালে আসলে এ গেমের অ্যাডমিন গেমারের ব্যক্তিগত তথ্যাদি হাতিয়ে নিতে থাকে। পরবর্তী ধাপগুলো ধাপে ধাপে কঠিণ ও মারাত্মক হতে থাকে।

এভাবে ২০তম ধাপ শেষ করে ২১তম ধাপ পর্যন্ত পৌছানোর পরে অ্যাডমিন টিম তাদের কৌশল পরিবর্তন করে ফেলে। আর ইতিমধ্যে অ্যাডমিন টিম গেমারের ব্যক্তিগত তথ্যাদি অনেকাংশেই হাতিয়ে নিতে সক্ষম হয়।

২১ থেকে ৩০তম ধাপের চ্যালেঞ্জ গুলো সম্মোহনের মাধ্যমে করানো হয়। সম্মোহন হচ্ছে মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণ করার এক ধরণের প্রক্রিয়া। আর এই প্রক্রিয়াকে ব্যবহার করে গেমারকে পরবর্তী ধাপের জন্য তৈরি করা হয় যাতে সে খুব সহজেই আত্মহত্যা করতে পারে।

এই ধাপগুলোর মধ্যে গেমারকে বিভিন্ন মাদক নিতে অভ্যস্ত করা হয় এবং খুবই সূক্ষ্মভাবে সম্মোহনের মাত্রা বৃদ্ধি করে গেমারকে ৩০তম ধাপে নেয়া হয়।

৩০তম ধাপের পর অ্যাডমিন টিম বা হোয়েল আরও বেশী কৌশলী হয়ে উঠে। তারা আর গেমের পরবর্তী ধাপগুলো আনলক করতে চায় না। অন্যদিকে গেমার ৩০তম ধাপ পর্যন্ত সম্পূর্ণ করে পরবর্তী ধাপগুলো খেলার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে এবং তখনই হোয়েল ৩১তম ধাপটি আনলক করে দেয় এবং গেমারের ব্যাক্তিগত মুহূর্তের ছবি তাদেরকে দিতে বলে। সে মুহূর্তে মাদকের কারণে হোক অথবা সম্মোহনের কারণে হোক গেমার হোয়েল যা বলে তাই করে থাকে।

এভাবে ৪০তম ধাপ পর্যন্ত পৌছানোর আগে এবং পৌছানোর পরে গেমার এই গেম থেকে মুক্তি চায় বা গেমটি আনইন্সটল করতে চায়। কিন্তু তখন আর গেমারের কিছু করার থাকে না। আর তখন হোয়েল গেমারকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি,ব্লাকমেইলিং,পরিবারের সদস্যদের ক্ষয়-ক্ষতির ভয় দেখিয়ে গেমটি খেলতে বাধ্য করে থাকে। বাধ্য হয়ে গেমারের আর তখন কিছু করার থাকে না। সে তখন মাদক নেয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরণের কর্মকান্ড হোয়েলের কথা অনুযায়ী করতে করতে ৫০তম ধাপে পৌছে যায়। ৫০তম ধাপে আসার পরে গেমারকে বলা হয়-
‘এটি তোমার জন্য শেষ ধাপ,এরপরে আমরা আর তোমাকে বিরক্ত করবনা,তুমি এই গেমটি থেকে মুক্তি পাবে,তোমাকে তোমার ব্যক্তিগত তথ্যাদি ফিরিয়ে দেয়া হবে এবং তারপরেই তুমি তোমার গেমটি আনইন্সটল করতে পারবে। তবে তার জন্য তোমাকে আমাদের কাছ থেকে একটি বিশেষ ধরণের মাদক সংগ্রহ করতে হবে এবং সেটি কোন উঁচু বিল্ডিং এর ছাদের কিনারায় গিয়ে শরীরে পুশ করবে এবং আমাদেরকে সেলফি তুলে আপলোড করবে। আর এরমাধ্যমে তুমি আমাদের কাছ থেকে মুক্তি পাবে’।
নির্দেশনা পাওয়ার পর গেমার মাদকটি সংগ্রহ করে ফেলে এবং নির্দেশনা অনুযায়ী সে চলে যায় উঁচু কোনো বিল্ডিং এর ছাদের কিনারায় এবং নিজের শরীরে সে মাদক পুশ করে এবং প্রমাণ স্বরূপ তার ছবি তুলে আপলোড করে।

ফটো আপলোড করার পরে হোয়েল তাকে কংগ্রাচুলেশন জানায় এবং বলে যে তুমি এখন থেকে আমাদের থেকে মুক্ত, নিচের দিকে তাকিয়ে দেখ তোমার গন্তব্য তোমাকে ডাকছে তবে আর দেরি করছো কেন এক্ষুনি ঝাপ দাও। গেমার তখন সেই বিশেষ মাদকের কারণে হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে নিচের দিকে লাফ দেয়। এভাবেই শেষ হয় একটি প্রাণ। আর ব্লু হোয়েল টিম খুঁজতে থাকে তাদের নতুন শিকারকে।

এছাড়া যদি কোনো গেমার উঁচু বিল্ডিং এর ছাদ থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করতে রাজি না হয় সেক্ষেত্রে হোয়েল গেমারকে আরো বেশ কয়েকটি আত্মহত্যার মাধ্যম দেয়। যেমনঃ বাড়ির জানালা থেকে লাফ দেয়া, ট্রেনের নিচে ঝাপ দেয়া, গলায় ফাঁস দেয়া, ওভার ডোজ ঔষধ খেয়ে, ধমনি কেটে ইত্যাদি।

তাছাড়াও ব্লু হোয়েল গেমের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো এর সিম্পল গ্রাফিকাল ইন্টারফেস, ব্রেন ওয়াশ করা কিছু ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক। মানুষকে সম্মোহিত করার জন্য মিউজিক বিশেষ ভূমিকা পালন করে। আর এই গেমে তা সূক্ষ্মভাবে কাজে লাগানো হয়েছে। এই গেমের শেষের দিকের ধাপে বেশকিছু ব্রেন ওয়াশ করারমত মিউজিক ও গান গেমারকে শুনতে ও গেমের ব্যাকগ্রাউন্ডে দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে – ‘ALL I WANT’ এবং ‘RUNWAY’ এই দুটি গান।

https://www.youtube.com/watch?v=wpFa7wIlyo4

তরুণ-তরুণীরা কেন আকৃষ্ট হচ্ছেঃ
_________________________________________________

ব্লু হোয়েলে সাধারণত অবসাদগ্রস্ত তরুণ-তরুণীরা আসক্ত হয়ে পড়ে। বিশেষ করে গভীর রাতে বা একাকী দীর্ঘ সময় যারা ইন্টারনেটে সামাজিকমাধ্যম জগতে বিচরণ করে তারা এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। এছাড়া তরুণ-তরুণীদের মধ্যে নিজেকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করার যে আগ্রহ সেটাকে কাজে লাগিয়ে ফাঁদে ফেলে এর কিউরেটররা।

অংশগ্রহণকারীদের প্রথমে সাহসের প্রমাণ দিতে বলা হয়। এজন্য তাদের ছোট ছোট কিছু সাহসী কাজ দিয়ে এগিয়ে নেয়া হয়। একবার এতে জড়িয়ে পড়লে আর সহসা বের হওয়ার সুযোগ থাকে না।

সহজ ও নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ এবং সাহস আছে কি না- এমন কথায় সাহস দেখাতে গিয়ে দিনকে দিন যুবক-যুবতীরা আকৃষ্ট হচ্ছে এই গেমে। তবে একবার এ খেলায় ঢুকে পড়লে তা থেকে বের হয়ে আসা প্রায় অসম্ভব।

ব্লু হোয়েলে আসক্তদের চিনবেন কীভাবেঃ
_________________________________________________

যেসব কিশোর-কিশোরী ব্লু হোয়েল গেমে আসক্ত হয়ে পড়েছে তারা সাধারণভাবে নিজেদের সব সময় লুকিয়ে রাখে। স্বাভাবিক আচরণ তাদের মধ্যে দেখা যায় না। দিনের বেশিরভাগ সময় তারা কাটিয়ে দেয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। থাকে চুপচাপ। কখনও আবার আলাপ জমায় অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে। গভীর রাত পর্যন্ত ছাদে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় অনেককে। একটা সময়ের পর নিজের শরীরকে ক্ষত-বিক্ষত করে তুলতে থাকে তারা।

এর থেকে বাঁচতে কী করা যায়ঃ
_________________________________________________

এই মরণ ফাঁদ থেকে বাঁচার জন্য মনোবিজ্ঞানীরা কিছু পরামর্শ দিচ্ছেন। সেগুলো হচ্ছে-

প্রথমতো আপনাকেই সচেতন হতে হবে। কেন আপনি অপরের নির্দেশনায় কাজ করবেন। আপনি যাকে কখনও দেখেননি, যার পরিচয় জানেন না, তার কথায় কেন চলবেন বা তার কথামতো কেন কাজ করবেন- সেটি নিজেকেই চিন্তা করতে হবে।

এরকম কোনো লিংক সামনে এলে তাকে এড়িয়ে চলতে হবে।

সমাজের তরুণ-তরুণীদের মাছে এই গেমের নেতিবাচক দিক সম্পর্কে প্রচারণা চালাতে হবে।

সন্তান, ভাই-বোন বা নিকটজনকে মোবাইলে ও কম্পিউটারে অধিক সময়ে একাকী বসে থাকতে দেখলে সে কী করছে, তার খোঁজ-খবর নিতে হবে। সন্তানকে কখনও একাকী বেশি সময় থাকতে না দেয়া এবং এসব গেমের কুফল সম্পর্কে বলা।

সন্তানদের মাঝে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার মানসিকতা সৃষ্টি করা। যাতে তারা আত্মহত্যা করা বা নিজের শরীরকে ক্ষতবিক্ষত করা অনেক বড় পাপ- এটা বুঝতে পারে।

সন্তান ও পরিবারের অন্য কোনো সদস্য মানসিকভাবে বিপর্যস্ত কিনা- সেদিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখা। কেউ যদি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয় তাকে সঙ্গ দেয়া।

কৌতূহলি মন নিয়ে এই গেমটি খেলার চেষ্টা না করা। কৌতূহল থেকে এটি নেশাতে পরিণত হয়। আর নেশাই হয়তো ডেকে আনতে পারে আপনার মৃত্যু।

এই সকল তথ্য জানার পরেও হয়ত পাঠকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে আচ্ছা আমি যদি আমার মোবাইল ফোনটিকে ধ্বংস করে ফেলি তাহলেতো আর কোন সমস্যা হবে না । এক্ষেত্রে আপনাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই ব্লু হোয়েল টিমের কাছে আপনাদের আইপি এড্রেস, ম্যাক এড্রেস আছে এবং তারা আপনার লোকেশন পর্যন্ত ট্রেক করে রেখেছে। তারা চাইলেই গেমারকে আবার তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারবে। তাই গেমার চাইলেই এ গেম থেকে সহজে নিষ্কৃতি মিলে না। সুতরাং এই গেম থেকে দূরে থাকাই শ্রেয়।

তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট.

https://www.youtube.com/watch?v=lHe5akL_LHM