‘বাংলা’ ভাষাকে গুরুত্ব দিচ্ছে গুগল  

বেশ কিছুদিন ধরেই বাংলা ভাষাকে গুরুত্ব দিতে শুরু করেছে গুগল। কারণ ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনলাইনে বাংলা ভাষার ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনলাইনে বাংলা ভাষায় রয়েছে নানা ওয়েবসাইট। তাই সব বিষয় বিবেচনা করে বাংলায় গুগল অ্যাডসেন্স চালু করা হয়েছে। অ্যাডসেন্স ছাড়াও সম্প্রতি বাংলা ভাষার জন্য বেশ কয়েকটি সেবা চালুর ঘোষণা দিয়েছে গুগল।

বাংলায় গুগল অ্যাডসেন্স:

মূলত অ্যাডসেন্স হলো গুগলের লভ্যাংশ-অংশীধারী বিজ্ঞাপন প্রকল্প। যার মাধ্যমে একটি ওয়েবসাইটের মালিক কিছু শর্তসাপেক্ষে তার সাইটে গুগল নির্ধারিত বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করতে পারেন। গত মঙ্গলবার এক অফিসিয়াল ব্লগ পোস্টে গুগল কর্তৃপক্ষ বাংলা ভাষার ওয়েবসাইটে গুগল অ্যাডসেন্স ব্যবহারের সুবিধা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ‘অ্যাডসেন্স নাউ আন্ডারস্ট্যান্ড বেঙ্গলি’ (বাংলা) শীর্ষক ব্লগ পোস্টে বলা হয়েছে, বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনলাইনে বাংলা ভাষার ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনলাইনে বাংলা ভাষায় রয়েছে নানা ওয়েবসাইট। তাই সব বিষয় বিবেচনা করে বাংলায় গুগল অ্যাডসেন্স চালু করা হয়েছে।
বর্তমানে বিশ্বের প্রায় দেড় কোটি ওয়েবসাইটে গুগল অ্যাডসেন্স ব্যবহার করা হচ্ছে। ২০১৫ সালেই গুগল অ্যাডসেন্স প্রকাশকদের প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার পেমেন্ট দিয়েছে, যা ক্রমবর্ধমান হারে বেড়ে চলেছে।
গুগল এসব বিজ্ঞাপন পাওয়া যাবে শর্তসাপেক্ষে। এ জন্য বাংলা সাইটগুলোকে গুগলের কাছে আবেদন করতে হবে। সংস্থাটির নির্ধারিত নীতিমালা পূরণ হলেই আবেদনকারীর সাইটে গুগলের বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হবে। বর্তমানে ৪০টি ভাষায় গুগল অ্যাডসেন্স চালু রয়েছে। বাংলা ভাষায় অ্যাডসেন্স চালু হওয়ায় নতুনমাত্রা যুক্ত হবে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেন, গুগল অ্যাডসেন্সের বাংলা ভাষায় সমর্থনের বিষয়টি দীর্ঘ দিনের প্রত্যাশিত ছিল। কারণ, এটি অন্যতম একটি ডিজিটাল টুলস। এটা বাংলা ভাষাভাষী ওয়েবসাইটগুলোর জন্য দারুণ সহায়ক হবে। সারা বিশ্বের ৩৫ কোটি মানুষের ভাষা বাংলা। আর বাংলা ভাষায় গুগল অ্যাডসেন্সের স্বীকৃতি মূলত ডিজিটাল দুনিয়ায় বাংলা ভাষার শক্তিশালী অবস্থানকেই তুলে ধরছে।
বাংলায় স্পিচ-টু-টেক্সট:


বাংলায় অ্যাডসেন্স চালুর আগে গত ১৪ আগস্ট গুগল নতুন ৩০টি ভাষা যোগ করেছে স্পিচ-টু-টেক্সটে। এতে গুগলের এ সুবিধাটি ব্যবহার করে বাংলায় উচ্চারণ করে টাইপ করা যায়। পাশাপাশি উচ্চারণ করেও গুগল সার্চ ইঞ্জিনে কোনো কিছু খোঁজা যায়। গুগল এটিকে বলছে টাইপ কম, কথা বেশি। গুগল এ প্রকল্প সম্পন্ন করতে বাংলা অভিধানের ৬৫ হাজারেরও বেশি শব্দ দিতে চেষ্টা করছে। এতে একটি চিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরা হচ্ছে কিভাবে বাংলা লেখা কথায় পরিণত হবে। চার ধাপে কাজটি হচ্ছে। টেক্সট টু স্পিচ প্রকল্প শেষ হলে যারা দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে বাংলা শিখতে চায়, তারা এটির মাধ্যমে অনর্গল কথা বলতে পারবে বলে ধারণা করছে গুগল। বিভিন্ন ভাষা যুক্ত করতে স্থানীয় ভাষাভাষীদের কথার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। আর পুরো প্রক্রিয়াটি মানে শব্দ শুনে তা টাইপ বা খোঁজার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় মেশিন লার্নিং পদ্ধতিতে। গুগল তাদের মেশিন লার্নিং পদ্ধতিকে আরো উন্নত করেছে।
বাংলার পাশাপাশি নতুন যোগ করা ভাষার মধ্যে উর্দু, নেপালি, তেলেগু, মারাঠি, তামিলসহ বিভিন্ন প্রাচীন ভাষা রয়েছে। নতুন ৩০টি ভাষা যুক্ত হওয়ায় গুগলের ভয়েস সার্চ সুবিধাটি বিশ্বের মোট ১১৯টি ভাষাভাষীর মানুষ ব্যবহার করতে পারবেন। আগামীতে বাংলাকে সমৃদ্ধ করার জন্য আরো নতুন প্রযুক্তি নিয়ে আসবে গুগল।