বাবা মাহমুদন্নবীর আদর্শকে সামনে রেখে সঙ্গীতে ক্যারিয়ার গড়েছেন ফাহমিদা নবী

বাংলাদেশের জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী ফাহমিদা নবীর গায়িকা জীবন শুরু ১৯৭৯ সালে।

বাবা কিংবদন্তী শিল্পী মাহমুদুন্নবীর বাড়িতে একটা গানের পরিবেশে বড় হয়েছিলেন তিনি। তবে সঙ্গীতকে কেরিয়ার হিসাবে বেছে নেবার একমাত্র কারণ সেটা ছিল না। সাক্ষাৎকারে ফাহমিদা নবী বলেছেন গান তার ভাল লাগত ছোটবেলা থেকেই।

“গান গেয়ে যে কিছু করা যায় বা এর সঙ্গে রোজগারের বিষয়টাও যে থাকে সেটা কিন্তু ছোটবেলায় ভাবিনি।”শিল্পী হিসাবে যাত্রা শুরুর পর ফাহমিদা নবী বুঝেছিলেন মাহমুদুন্নবীর কন্যা হিসাবে তার কাছে মানুষের বিরাট প্রত্যাশা রয়েছে।কিন্তু সঙ্গীত জীবনে তার অন্যতম সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল প্রথম মঞ্চে ওঠার পর বাবার মূল্যায়ন। “সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে আমি মঞ্চে যখন প্রথম উঠি আমার বাবাই আমার সাথে হারমোনিয়াম বাজিয়েছিলেন। দর্শক শ্রোতাদের চেয়ে আমি বেশি চিন্তা করছিলাম বাবা বাসায় গিয়ে বলবেন কী? কেমন গাইলাম? এই ভয়টা আমার বেশি কাজ করেছিল। ”

প্রথম গাওয়ার সেই অভিজ্ঞতায় ফাহমিদার বড় পরীক্ষা ছিল বাবার সাথে। “শ্রোতারা তো খুশি- মেয়ে গান গাইছে- বাবা বাজাচ্ছে। আর আমার চিন্তা আব্বা কী বলেন। কিন্তু সারা রাস্তা তিনি কিছুই বলেন নি। বাসায় এসে বললেন নুমা তো ভালই গান গাইল। আমার ডাক নাম ‘নুমা’।” বাবার লেখা ও সুরে সেদিন তিনি গেয়েছিলেন – আমি এক পঙ্কিল পদ্ম। তবে এর আগে ১৯৭৯ সালে আবদুল্লা আবু সায়ীদ উপস্থাপিত চতুরঙ্গ নামের একটি বিনোদন অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে তিনি সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব হিসাবে প্রথম পরিচিতি পান। “আমার মাও খুব ভাল গান গাইতেন। পরে মা-ই আমাকে বলেছিন শুধু গান গাইলেই হবে না, শিখতেও হবে। তখন ওস্তাদ আমানুল্লা খানের কাছে আমরা তালিম নিই। বাবাও শেখায় উৎসাহ দিতেন । গান শেখা শুরু করেছিলেন স্কুলে ‘আমার সোনার বাংলা’ জাতীয় সঙ্গীত দিয়ে। এরপর ছিল নজরুলগীতি, দেশাত্মবোধক গানসহ নানাধরনের সঙ্গীত শেখার পালা। কিন্তু টেলিভিশনে প্রথম গাইলেন কাওসার আহমেদ চৌধুরীর লেখা লাকী আখেন্দের সুরে একটি গান । “সেই সময় অনেক মৌলিক গান তৈরি হতো। গীতিকার, সুরকার আর শিল্পী সব মিলিয়ে ছিল একটা টিম ওয়ার্ক।” “মেলোডিয়াস, রোমন্টিক গান আমার অনেক পছন্দ। খুব বেশি রিদম্ আমাকে টাচ্ করে না। আমার ভাল লাগে একটু সফট মেলোডি। মানুষ আমার কণ্ঠে শুনতে চায় প্রেমের গান।” বোন সামিনা চৌধুরীও জনপ্রিয় শিল্পী – দুজনে বেড়ে উঠেছেন প্রায় একসঙ্গে এবং দুজনেই মঞ্চে জনপ্রিয়।

ফাহমিদা বলছিলেন দুজনেই গান করেন প্রাণের আনন্দে। “তবে আমাদের সামনে সবসময় একটা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ছিল আমরা কী চাই। আমরা সঙ্গীত জীবনে বাবার পথচলাকে যেভাবে দেখে এসেছি, আমরা সেই পথ ধরেই চলতে চাই – মানুষকে এবং শ্রোতাকে আমরা সেই জায়গায় নিয়ে যেতে চাই। ” তিনি বলেন ওই জায়গা থেকেই তারা দুই বোন যখন গান করেন, তখন মানুষ তাদের নিয়ে ভাবে, “আমাদের দায়িত্বের জায়গাটা মনে হয় আরেকটু বেড়ে যায়। যে আরও ভাল করে গান গাইতে হবে।” “তবে যদি বলেন আমি কাকে কম্পিটিটার ভাবি – সামিনাকেই আমি আমার কম্পিটিটার ভাবি।” পৃথিবীর নানা দেশে সঙ্গীত পরিবেশন করছেন ফাহমিদা নবী। নানা রুচির, নানা বয়সের মানুষ তার শ্রোতা। ফাহমিদা বলছিলেন একজন শিল্পী আসলে প্রথমে শ্রোতা তৈরি করে। তিনি বলেন তিনি তার গানের ক্ষেত্রে একটা ধারা তৈরি করেছেন- যে ধারার বাইরে তিনি যেতে পারবেন না। “আমি শ্রোতা তৈরি করেছি। এখন শ্রোতাও জানে আমি কী ধরনের গান গাইতে পছন্দ করি। আমার ধরনটা যে শুদ্ধতার ধরন সেটা কিন্তু শ্রোতা বোঝে। আমি যখন মঞ্চে উঠি আমি বুঝতে পারি কী গাইব- শ্রোতাও আমার কাছ সেটাই আশা করে।” যে গানে গল্প নেই, সে গান ফাহমিদাকে আকর্ষণ করে না। গান তার কাছে একটা সিনেমা। তিনি বলেন শ্রোতাকে তিনি গানের মধ্যে দিয়ে সিনেমার চিত্রকল্পে নিয়ে যেতে চান। “গান শুনতে শুনতে যদি সেই চিত্রকল্পে শ্রোতাকে নিয়ে যেতে না পারি, তাহলে গান গাওয়ার কোনো মানে নেই।”

ফাহমিদা মনে করেন শ্রোতারা শিল্পীর গানের মধ্যে দিয়ে কল্পনার সেই ছবিটা দেখতে চান। তিনি মনে করেন এর জন্য গানের সঙ্গে সঙ্গীত অনেক সাদামাটা সহজ হতে পারে।