সংসদীয় আসনের বিদ্যমান সীমানা বহাল, আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর মতো করে সেনা মোতায়েনসহ ১২ দফা প্রস্তাব দিয়েছে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি।
আজ বৃহস্পতিবার দলটির প্রেসিডেন্ট অলি আহমেদের নেতৃত্বে ২১ সদস্যের প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনের সংলাপে এ সুপারিশ দিয়েছে।
এর মধ্য দিয়ে দিয়ে নিবন্ধিত ৪০টি দলের সাথে সংলাপ শেষ হলো।
সংলাপে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে চার নির্বাচন কমিশনার, ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সংলাপ শেষে অলি আহমেদ বলেন, প্রতি ১০ বছর পর পর সীমানা পুননির্ধারণের জন্য ব্যবস্থা করতে হয়। এটা ব্যয় বহুল ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। পৃথিবীর অনেক সভ্য দেশেও এ ব্যবস্থা চালু নেই। এজন্য ২০১৩ সালে যে নির্বাচনী এলাকা নির্ধারণ করা হয়েছে তাতে কারো আপত্তি রয়েছে বলে মনে করি না। এজন্যে সীমানা পুনর্নির্ধারণে কাজ বন্ধ করার কথা জানিয়েছেন তিনি।
তিনি জানান, ভোটের ১৫ দিন আগে থেকে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে সেনা মোতায়েন অপরিহার্য। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে সেনার তদারকি ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনুরূপ ক্ষমতা দেয়া জরুরি। বায়োমেট্রিক পদ্ধতি ও ফিঙ্গার প্রিন্ট নেয়ার সুপারিশসহ ইভিএম চালুর বিষয়ে সবার ঐক্যমত নেওয়ার পক্ষে এলডিপি।
নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো প্রস্তাব না থাকলেও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে দেশের প্রয়োজনে নতুন আইন প্রণয়নের আহ্বান জানান অলি আহমেদ।
তিনি লিখিত প্রস্তাবে বলেছেন, ১৯৭৯ ও ১৯৯১ সালের ভোট ছাড়া অন্য নির্বাচনগুলো ছিল বিতর্কিত। ইসির রোডম্যাপ বিভ্রান্তিকর, সময়ক্ষেপণ ও অহেতুক অর্থ ব্যয়ের একটি প্রস্তাব।
সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে ইসির ভূমিকা আরো স্পষ্ট হওয়া উচিত।
১৬তম সংশোধনীর প্রসঙ্গ টেনে তিনি উল্লেখ করেন, ১০ম ও ১১তম সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করা যেতে পারে বলে রায়ে বলা হয়েছে। ইসিকে শক্তিশালী করারও নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত। কিন্তু এ ব্যাপারে সরকারের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। ইসি এখনও দৃশ্যত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। জাতি আজ গভীর সংকটে নিমজ্জিত।
এলডিপির উল্লেখযোগ্য প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে- সংসদ ভেঙে নির্বাচন অনুষ্ঠান, নির্বাচনের আগে বিশেষ অভিযানের মাধ্যমে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও অস্ত্র উদ্ধার করা, ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের জন্য এনআইডি বাধ্যতামূলক করা এবং নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা দায়িত্বে অবহেলা করলে শাস্তির বিধান করা।
এর আগে সকালে জাতীয় পার্টির (জেপি) সাথে সংলাপে বসে ইসি। সংলাপে সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে ভোটের প্রস্তাব দিয়েছে দলটি। পাশাপাশি সেনা মোতায়েন, সীমানা পুনর্বিন্যাস ও ইভিএম-এর বিপক্ষে নিজেদের অবস্থানের কথা জানিয়েছে দলটি।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে জেপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল সংলাপে অংশ নেয়।
সংলাপে মোট আটটি সুপারিশ করেছে জেপি।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, আমাদের বক্তব্য তো সংবিধানের বাইরে যাবে না। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে বারবার যেখানে আঘাত করা হয়েছে সেখানে আমাদের একটা স্ট্যান্ড ছিল। আমাদের অবস্থান নির্বাচনের পক্ষে।
আগামীতে ভালো নির্বাচন হোক প্রত্যাশা ব্যক্ত করে মঞ্জু আরো বলেন, একবারেই সুষ্ঠু নির্বাচন হবে? সেই পাকিস্তান আমল থেকে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হয়েছে, প্র্যাকটিস করতে দেয়া হয়নি।
সেনা মোতায়েনের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা সেনা মোতায়েনে পক্ষে না, বিপক্ষেও না। সেনা বলে কোনো গোষ্ঠী বা জাতি এখানে নেই। সবাই মানুষ। ভোটকে সামনে রেখে জাতীয় সংলাপের প্রয়োজন রয়েছে কি না জানতে চাইলে জেপি চেয়ারম্যান বলেন, আমরা আমাদের সংলাপ করি; আমরাই তো জাতি, বিজাতি নাকি?
পরে দলের মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, অর্থবহ অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন চাই। সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করুক। তবে একটি বা দুটি রাজনৈতিক দল অংশ না নিলে অর্থবহ হবে না তা নয়। ’৭০-এর নির্বাচনে মাওলানা ভাসানির দল অংশ না নিলেও গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। আগামীতেও এ রকম গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য ইসির একটি নিরপেক্ষ ভূমিকা নিতে বলেছি। প্রশাসনের সহায়তায় সেনা মোতায়েনের প্রয়োজন হলে সেনা মোতায়েন করা যেতে পারে বলে মত দেন তিনি।
সহায়ক সরকার বা নির্বাচনের সময় সরকার নিয়ে ইসির এখতিয়ারের বাইরে থাকায় তা নিয়ে কোনো মত দেয়নি জেপি। সব রাজনৈতিক দল একমত না হলে ইভিএম ব্যবহারের বিপক্ষে মত দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
জেপির আট দফা প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে- সংবিধান অনুযায়ী ভোট, প্রয়োজনে সেনা মোতায়েন, ইভিএম ব্যবহার না করা, সংসদীয় আসনে আগের সীমানা বহাল রাখা, রাজনৈতিক দলকে মনিটরিং, ভোটার তালিকা নির্ভুল করা।