হ্যালোইন!

হ্যালোইন অনেকটা গল্পনির্ভর সাংস্কৃতিক উৎসবের মতো। প্রতিবছর অক্টোবরের শেষ দিন দিবসটি পালিত হয় যুক্তরাষ্ট্রের সর্বত্র। বিচিত্র সব ভয় জাগানিয়া পোশাক পরা, মুখোশ পরে বাচ্চাদের ক্যান্ডি সংগ্রহ, বিচিত্র পোশাকে শিশুদের সাজিয়ে প্যারেডে যোগ দেওয়া—এসবই দিনটির প্রধান আকর্ষণ।


হ্যালোইন উৎসবের উৎস নিয়ে নানা মুনির নানা মত। যারা উৎসবে মেতে ওঠে, তাদেরও ঠিক ধারণা নেই এ উৎসবের উৎস সম্পর্কে। গল্পনির্ভর এ উৎসব পশ্চিমা সমাজে অনেক পুরোনো। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর পরিবর্তন ঘটেছে। জানা তথ্যমতে, হ্যালোইন (Halloween) শব্দের উৎপত্তি ১৭৪৫ সালের দিকে। খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে এর উৎপত্তি। এর বাংলা মানে হলো পবিত্র বিকেল বা রাত। এটা স্কটিশ শব্দ, যার মানে হলো ‘সবকিছু পবিত্র’/ ‘অল হ্যালোস’ (All Hallows) থেকে এসেছে, যা পবিত্র বিকেল বা রাতের পূর্ববর্তী দিবসকে বোঝাত। আধুনিক হ্যালোইন ইউরোপের পশ্চিমাঞ্চলীয় কেল্ট ভাষাভাষী দেশের অধিবাসীদের লোকাচার ও বিশ্বাস দ্বারা প্রভাবিত ধর্মাশ্রয়ী সামাজিক সংস্কৃতি। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন এ সংস্কৃতির সঙ্গে বিশ্বের প্রধান প্রধান ধর্মে (ইহুদি, খ্রিষ্টান বা ইসলাম) বিশ্বাস করে না এমন পৌত্তলিকবাদীর সূত্র থেকে উত্থিত হয়েছে। জনৈক লোকাচারবাদী লেখকের মতে, পুরো আয়ারল্যান্ডে লোকাচার ও বিশ্বাসের সঙ্গে খ্রিষ্টানধর্মপূর্ব আইরিশদের লোকাচার ও বিশ্বের মধ্যে একটা অস্বস্তিকর সমঝোতা ছিল। ঐতিহাসিক নিকোলাস রজার্স হ্যালোইনের উৎপত্তি খুঁজতে গিয়ে বলেন, রোমানদের প্রাচুর্যময় ফলের দেবী পোমানার সম্মানে ভোজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হ্যালোইন। এ প্রসঙ্গে আরও নানা ধরনের পৌরাণিক কাহিনি রয়েছে। তবে আধুনিক হ্যালোইন লোকাচারকে খ্রিষ্টীয় ধর্ম মতবাদের প্রভাব রয়েছে বলে মনে করা হয়। ৩১ অক্টোবর ও নভেম্বর মাসের ১ ও ২ তারিখে ইউরোপ-আমেরিকার অধিকাংশ খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী হ্যালোইন উৎসব পালন করে। স্কটল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ড থেকে আগত অভিবাসীরা হ্যালোইনকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে আসেন।

এ উৎসব পারিবারিক পর্যায়ে বন্ধুবান্ধব, কখনো কখনো সহকর্মীদের নিয়ে উদ্‌যাপন করা হয়। কোনো কোনো এলাকায় এ উৎসব ব্যাপক আকারে পালন করা হয়। বয়স্ক ব্যক্তিরা ভয়ংকর ধরনের চলচ্চিত্র কিংবা পোশাক উৎসব কিংবা ভুতুড়ে বাড়ি কিংবা কবরস্থান তৈরি করেন। শিশুরা বর্ণাঢ্য পোশাক পরে প্রতিবেশীর বাড়িতে ঘুরে বেড়ায়। কোনো কোনো পরিবার পামকিন (লাউ/কুমড়াসদৃশ্য) কিংবা অন্যান্য সবজি ব্যবহার করে ভীতি উদ্রেককারী মুখাবয়ব তৈরি করে। অথবা তারা হ্যালোইন স্টাইলে তাদের বাড়ি ও বাগান সাজায়। হ্যালোইনের সময় আপনি বাড়িতে থাকলে কেউ হয়তো কিছু উপহার সামগ্রী কিংবা মিষ্টি নিয়ে আপনার বাড়িতে আসতে পারেন। এর উদ্দেশ্য হলো আপনার প্রতিবেশী এলাকার অদৃশ্য অপশক্তিকে খুশি করা।
হ্যালোইনের সময় জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক জরুরি শিশু তহবিল—ইউনেসকো অনুদান সংগ্রহ করে থাকে। শিশুরা ছোট ছোট বাক্স নিয়ে এ উদ্দেশ্যে অর্থ সংগ্রহ করে। সংগৃহীত এ অর্থ বিশ্বব্যাপী দরিদ্র শিশুদের সাহায্যের জন্য ব্যবহার করা হয়। হ্যালোইনের সময় সরকারি ছুটি থাকে না। সরকারি অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে স্বাভাবিক কাজকর্ম অব্যাহত থাকে। যাত্রীবাহী যানবাহন সঠিক সময়ে চলাচল করে। হ্যালোইনকে ব্যবসায়ীরা তাঁদের বিবিধ সামগ্রী বিক্রির সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করেন। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে হ্যালোইন উপলক্ষে পোশাকসহ অন্যান্য ফ্যাশনে নানা ধরনের পরিবর্তন প্রতিবছরই হয়ে থাকে। বিশেষত সাজসজ্জার সরঞ্জাম, ক্যান্ডিসহ নানা ধরনের সামগ্রী প্রস্তুতকারীদের জন্য হ্যালোইন-বাণিজ্য বৃদ্ধির আমেরিকার ব্যবসায়ীদের জন্য আশীর্বাদের উৎসব।
দিনটিতে একে অন্যকে ‘হ্যাপি হ্যালোইন’ বলে কুশল বিনিময় করতে দেখা যায়।