চলছে ‘নবান্ন উৎসব’। জারি-সারি, বাউল ও ভাওয়াইয়া গানসহ নানান সাংস্কৃতিক কর্মকা- উপভোগ করতে উৎসুক জনতায় মুখরিত ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর। ১৬ নবেম্বর থেকে শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী এ উৎসবে দেশীয় ঐতিহ্যের পরশ পেতে ছুটছেন রাজধানীবাসী। শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় সকাল থেকেই মেলা প্রাঙ্গণে ছিল মানুষের উপচে পড়া ভিড়। সন্তান, পরিবার-পরিজন ও বন্ধুবান্ধব নিয়ে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি উৎসবকে করেছে মুখরিত। ব্যস্ত রাজধানীতে বন্দীপ্রায় শিশুরাও যেন স্বস্তি পেয়েছে মেলা প্রাঙ্গণে ঘুরতে এসে। বর্তমান সময়ের অনেক শিশুই জানে না বাঙালীর লোকজ সংস্কৃতি সম্পর্কে। জানে না নবান্ন উৎসব কি। আবহমান বাংলার সংস্কৃতি থেকে দূরে থাকা শিশুসহ সবার কাছে বাংলার লোকজ সংস্কৃতি নতুন করে সামনে আনতেই ‘প্রাণ চিনিগুঁড়া চাল’ আয়োজন করছে নবান্ন উৎসব-১৪২৪।
‘নবান্ন উৎসবে’ মঞ্চে গান আর মঞ্চের বাইরে পিঠা উৎসব এমন উন্মুক্ত আয়োজনে নবান্নের আনন্দে মেতেছে রবীন্দ্র সরোবর। বাঙালীর ঐতিহ্যকে ধারণ করে মেলা প্রাঙ্গণে ছন আর বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ৩২টি স্টল। বাংলার নবান্নের ঐতিহ্যবাহী পিঠা-পুুলি, পায়েসসহ নানা ধরনের খাবার পাওয়া যাচ্ছে সেখানে। শুধু তাই নয় নাগরদোলা, পুতুল নাচ, বায়োস্কোপ, বানর নাচ, সাপ খেলা ও ঢেঁকিসহ গ্রামবাংলার নানান ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার সুযোগ থাকছে সেখানে। এছাড়া তরুণ প্রজন্মকে বাঙালীর ঐতিহ্যকে বোঝানোর চেষ্টায় ভাওয়াইয়া, একক সঙ্গীত, কবিতা আবৃত্তি ও পথনাটকসহ বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
মেলার দায়িত্বরত বঙ্গ মিলারস্ লি. কোম্পানির প্রধান বিপণন কর্মকর্তা মোঃ মুস্তাফিজুর রহমান জানান, ‘বাংলার ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে আমরা দ্বিতীয়বারের মতো তিন দিনব্যাপী এই মেলার আয়োজন করেছি। মূলত তরুণ প্রজন্মের সামনে বাংলার ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি তুলে ধরতেই এই মেলার আয়োজন। এর মাধ্যমে আমরা বাংলার ঐতিহ্যবাহী নবান্নকে তুলে ধরার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। গ্রাম-বাংলার নবান্নর চিত্র তুলে ধরা হবে। এখানে এসে শহরের শিশুসহ সব বয়সী মানুষ নবান্নর সঙ্গে নতুনভাবে পরিচিতি লাভ করবে। কালের বিবর্তনে আমাদের সংস্কৃতি থেকে অনেক ঐতিহ্যবাহী উৎসব হারিয়ে যাচ্ছে। নবান্ন উৎসবের মতো এমন গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী উৎসব শহরের মানুষের কাছে পরিচয় করিয়ে দেয়াই এ আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য।’
উৎসবের বিভিন্ন আয়োজনের পাশাপাশি রয়েছে সাংস্কৃতিক পর্বে গান পরিবেশন। জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী ইন্দ্রমোহন রাজবংশী, ফকির আলমগীর, আবু বকর সিদ্দিক, লিলি ইসলাম, অনিমা রায়, ফেরদৌসী কাকলীসহ বিভিন্ন শিল্পীদের মনমাতানো গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী গানগুলো যেন উৎসবে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।