মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে হত্যা-ধর্ষন-অগ্নিসংযোগসহ নৃশংসতার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা, রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও মর্যাদার সাথে নিজ বাসভূমে ফিরে যাওয়ার সুযোগ দেয়া এবং তাদের নাগরিকত্বসহ পূর্ণ অধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানানোর লক্ষ্যে জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে আগামীকাল মঙ্গলবার বিশেষ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের অনুরোধে জেনেভাতে এই বিশেষ অধিবেশনের আয়োজন করা হয়েছে। ৪৭ সদস্যের জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে বিশেষ অধিবেশন আহ্বানের জন্য অন্তত ১৬টি দেশের সমর্থন প্রয়োজন হয়। আর ৩৩টি দেশের সমর্থন নিয়ে এই অধিবেশন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে চীন ও ভারত বিশেষ অধিবেশন আহ্বানের অনুরোধকে সমর্থন জানায়নি।
অধিবেশনের বিষয়বস্তু হলো, ‘মিয়ানমারের রাখাইনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠী ও অন্য সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার পরিস্থিতি’।
এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় উদ্যোগের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক চাপও বজায় রাখবে। মানবাধিকার কাউন্সিলের বিশেষ অধিবেশন ডাকার ব্যাপারে সম্প্রতি মিয়ানমারের রাজধানী নেইপিডোতে আসেম (এশিয়া-ইউরোপ বৈঠক) পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনের সাইডলাইনে অনুষ্ঠিত সভায় আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের এই উদ্যোগে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রের সমর্থন রয়েছে।
রাখাইনে পরিস্থিতি তদন্তে জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কাউন্সিল একটি তথ্যানুসন্ধান মিশন গঠন করেছে। এই মিশন বাংলাদেশের কক্সবাজার ঘুরে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে গেছে। তবে মিয়ানমার সরকার মিশনটিকে রাখাইন সফরের অনুমতি দেয়নি। বিশেষ অধিবেশনে এই বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দেয়া হবে। মানবাধিকার কাউন্সিলের প্রধান জিয়াদ রাদ আল-হুসেইন রাখাইনের সহিংসতাকে ‘জাতিগত নিধনের পাঠ্যপুস্তকীয় উদারহণ’ হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা জানান, কাউন্সিলের ৪৭টি সদস্য দেশের মধ্যে চীন ও ভারত রয়েছে। তবে তারা মিয়ানমার ইস্যুতে বিশেষ অধিবেশন আহ্বানকে সমর্থন জানায়নি। এর আগে জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের থার্ড কমিটির ভোটাভুটিতে মিয়ানমারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল চীন, আর ভারত ভোট দেয়া থেকে বিরত ছিল। জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে মিয়ানমার ইস্যুতে সর্বসম্মত প্রস্তাব গ্রহণের জন্য চীন ও ভারতের সাথে যোগাযোগ রাখছে বাংলাদেশ। সর্বসম্মত না হলেও অন্তত বিপুল ভোটে যাতে প্রস্তাবটি গৃহীত হয়, সেজন্য কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো হচ্ছে। এই সমর্থন আদায়ের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ঢাকায় নিযুক্ত মিশন প্রধানদের সাথে আলোচনা করেছে।