রাজধানীর পান্থপথের বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সে মোবাইল ফোনের দোকানে অবৈধ পণ্যের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে শুল্ক গোয়েন্দাদের বিশেষ টিম। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি) কাজী মোহাম্মদ জিয়া উদ্দিন আহম্মেদ এই অভিযানের নেতৃত্ব দেন। অভিযান শেষে জব্দকৃত অবৈধ মোবাইল ফোনসহ বের হয়ে আসতে চাইলে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখে বসুন্ধরা মালিক সমিতি এবং দোকান মালিক ও কর্মচারী সমিতির সদস্যরা।
এসময় কর্মকর্তাদের গাড়ী বহরে হামলা ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে বিক্ষুদ্ধরা। কয়েক ঘণ্টা রাস্তা অবরোধ করে শুল্ক কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে রাখলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহীনি ছিল নির্বিকার। ফলে ফার্মগেট, বিজয় সরণি, পান্থপথ, ধানমণ্ডি, বাংলামোটর এলাকায় ভয়াবহ যানজট তৈরী হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শনিবার সকাল ১১টায় রাজধানীর পান্থপথের বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সে শুল্ক গোয়েন্দার বিশেষ টিম মোবাইল ফোনের মার্কেটের দোকানে অবৈধ পণ্যের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে। অভিযান চলাকালে টিমের সদস্যরা ১০০টির বেশি অবৈধ আইফোন জব্দ করেন। যার বর্তমান বাজার মূল্য ৮০ থেকে ৯০ লাখ টাকা।
অভিযান শেষে জিয়া উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, শুল্ক গোয়েন্দার নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে আজ অভিযান চালিয়ে ১০০টির বেশি আইফোন জব্দ করা হয়েছে। রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্ক, মহাখালী, গুলশান ও উত্তরায় শুল্ক গোয়েন্দার পৃথক টিম অভিযান পরিচালনা করেছে।
তিনি বলেন, বসুন্ধরায় মোট ১৪টি দোকানে অভিযান চালালেও অবৈধ আইফোন পাওয়া যায় মাত্র দুটিতে। মোবাইল গেজেট জোন নামের দোকানে মেলে ১০টি ও ফোন এক্সচেঞ্জ নামের দোকানে মেলে ৯০টি আইফোন। বাকি দোকানগুলোতে অবৈধ মোবাইল হ্যান্ডসেট পাওয়া যায়নি। সেখানে শুধু প্যাকেট পাওয়া গেছে। অভিযানের বিষয়টি টের পেয়ে ওই প্যাকেটের আইফোনগুলো সরিয়ে ফেলেছেন কর্মচারীরা।
তিনি বলেন, যেখান থেকেই আইফোন কেনা হোক না কেন তার সঙ্গে বৈধ কাগজপত্র থাকতে হবে। জব্দ হওয়া ১০০টি মোবাইল ফোনের কোনো কাগজপত্র নেই। তাই এগুলো শুল্ক গোয়েন্দা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
অভিযান শেষে দুপুর দেড়টায় মার্কেট থেকে বের হওয়ার পরপরই এই অনাকাঙ্খিত ঘটনার মুখোমুখি হতে হয় শুল্ক গোয়েন্দার টিমকে।
দোকান কর্মচারীদের তোপের মুখে শুল্ক কর্মকর্তারা গাড়ি ঘুরিয়ে কারওয়ানবাজার মোড়ের দিক যেতে চাইলে সেখানে রাস্তা অবরোধ করে বসে পড়েন দোকান কর্মচারীরা। এর ফলে শুল্ক গোয়েন্দা টিমের সদস্যরা আটকা পড়েন। সেখানে র্যাব ও পুলিশ সদস্যরা তাদের নিরাপত্তায় তৎপর হলে র্যাব ও পুলিশের সঙ্গে দোকান কর্মচারীদের ধস্তাধস্তি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে থেমে থেমে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে।
বেলা ৩টায় এডিজির গাড়িসহ বহরে থাকা গাড়িগুলো রাস্তার পাশে দাড় করিয়ে রাখা হয়। যান চলাচল স্বাভাবিক করার জন্য র্যাব সদস্যরা ব্যারিকেড সরিয়ে দেয়। রাস্তায় যান চলাচল শুরু হলে দোকান কর্মচারীরা আবার রাস্তা আটকে দেয়। দোকান কর্মচারীরা এডিজির গাড়ির চাকার হাওয়া ছেড়ে দিয়ে গাড়ী আটকে রাখে।
এরপর বিকেল সাড়ে ৩টায় মার্কেটের গ্রাউন্ড ফ্লোরে শুল্ক গোয়েন্দা টিমের কর্মকর্তাদের সাথে বসুন্ধরা মালিক সমিতি এবং দোকান মালিক ও কর্মচারী সমিতির নেতাদের সাথে বৈঠকে বসে।
বৈঠক শেষে কাজী মো. জিয়াউদ্দিন বলেন, আমাদের কাছে ৬৪টি হ্যান্ডসেট জব্দ করা আছে। কাগজপত্র যাচাই করে ফেরত দেয়া হবে। মালিক সমিতির লোকজনকে শুল্ক গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যদি কারও কাগজ বৈধ থাকে তাহলে তাদের আইফোন ফেরত দেয়া হবে। সেটগুলো আমাদের জিম্মায় রাখা আছে।