বাংলাদেশের অধিকাংশ গণপরিবহণের চালক ও হেলপার মাদকাসক্ত। যে কারণে একের পর দুর্ঘটনা ঘটছে। পরিবহন মালিকেরাও এই একই অভিযোগ করেছেন।
খোদ মালিকেরাই বলেছেন, পরিবহন শ্রমিকেরা মাদকাসক্ত। ইয়াবা সেবন করে তারা গাড়ি চালায়।এদের কারণেই রাস্তায় একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে। ইয়াবা আসক্ত হওয়ার কারণে রাস্তায় গাড়ি চালানোর সময় কোনো ঝুঁকিকে ঝুঁকিই মনে হয় না চালকদের কাছে।
পথচারীদের সাথে এ বিষয়ে কথা বললে অনেকেই জানান, গাড়িচালকেরা আগে খুবই শান্তশিষ্ট ছিল। কখনো যাত্রীরা গালাগাল করলেও যাত্রীদের সাথে কখনো চালক বা হেলপারেরা খারাপ আচরণ করত না। এখন এর উল্টো। চালক এবং হেলপারেরা অনেক সময় যাত্রীদের গায়ে পড়ে ঝগড়া লাগাচ্ছে। কয়েকজন যাত্রী বলেন, ইদানীং চালকদের আচরণ স্বাভাবিক মনে হয় না।
ঢাকার পরিবহন মালিকদের সংগঠন বলছে, ঢাকা শহরের পরিবহন শ্রমিকদের প্রায় ৫০ শতাংশই মাদক সেবন করে। বেশির ভাগই আবার ইয়াবা খায়। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে তারা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকে আহ্বান জানিয়েছে।
গত মঙ্গলবার ঢাকার মহানগর নাট্যমঞ্চে পরিবহন মালিক, শ্রমিক এবং ঢাকা মহানগর মেট্রোপলিটন পুলিশের যৌথ সভা হয়। সেখানে বিভিন্ন বিষয়ের পাশাপাশি পরিবহন শ্রমিকদের মাদক গ্রহণের বিষয়টি উঠে আসে। সেখানে পরিবহন মালিক সমিতির সেক্রেটারি খন্দকার এনায়েত উল্লাহ শ্রমিকদের মাদকাসক্তের বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ঢাকায় প্রায় ৫০ হাজার পরিবহন শ্রমিক রয়েছেন যার ৫০ শতাংশই মাদকাসক্ত।
মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, ইয়াবা সেবন করলে তা তাৎক্ষণিক পরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই। অ্যালকোহল সেবন করলে তা পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করা সম্ভব। কিন্তু ইয়াবা সেবন করলে তা পরীক্ষা সম্ভব হয় না। ফলে পরিবহন শ্রমিকেরা এখন নির্বিঘ্নে ইয়াবা সেবন করে গাড়ি চালায়।
বিপ্লবী সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আলী রেজা নয়া দিগন্তকে বলেন, মাদক আগের চেয়ে অনেক ছড়িয়ে পড়েছে। এটা অস্বীকার করা যাবে না। অপ্রিয় হলেও সত্য, সন্ধ্যার পরে টার্মিনালগুলোতে গাঁজার গন্ধে ঢোকা যায় না। তিনি বলেন, শ্রমিকদের ওপর এখন সংগঠনগুলোর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। যে কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, ৫০ শতাংশ না হলেও মাদক সেবনের মাত্রা বেড়েছে। এর সহায়তা করছে কিছু পুলিশ সদস্য। আলী রেজা বলেন, যেখানে পুলিশের দায়িত্ব মাদকাসক্তদের গ্রেফতার করা সেখানে কিছু পুলিশ সদস্যের মাদকসেবীদের সহায়তা করা খুবই দুঃখজনক।
নিরঞ্জন তুরাগ পরিবহনের একজন হেলপার। সম্প্রতি রাজধানীর সূত্রাপুর এলাকায় ইয়াবাসহ আটক হয় সে। পুলিশের বক্তব্য নিরঞ্জন ইয়াবার ব্যবসা করে। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরণ করে। কয়েক দিনের মধ্যে নিরঞ্জন মুক্ত হয়ে জেল থেকে বের হয়।
সে জানায়, সে ইয়াবার ব্যবসায় করে না, ইয়াবা সেবন করে। এক পুলিশ সদস্য তার কাছে ইয়াবা দাবি করেছিল। না দেয়ায় তাকে গ্রেফতার করেছে।