ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার কৃষকেরা দিনের পর দিন বিএডিসির বীজ বিক্রয়কেন্দ্রে গিয়েও বীজ পাচ্ছেন না। কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ বলছে, বীজধানের সংকট দেখা দিয়েছে। অথচ ওই কেন্দ্রের পাশের দুটি দোকানেই চড়া মূল্যে মিলছে বিএডিসির বীজধান। এ অবস্থায় বীজের দাবিতে গতকাল রোববার কৃষকেরা উপজেলা পরিষদ চত্বরে মানববন্ধন করেছেন।
গতকাল বেলা ১১টার দিকে নান্দাইল শহরের নতুন বাজার এলাকায় অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) বীজ বিক্রয়কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, শতাধিক কৃষকের ভিড়। তাঁদের অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁরা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকে ঈদের আগেও বীজধান কিনতে এসেছিলেন। কিন্তু তখন ঈদের পরে বীজধান দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল।
জাহাঙ্গীরপুর ইউনিয়নের জোয়ালভাঙা গ্রামের কৃষক আবদুর রাজ্জাক বলেন, তিনি প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূর থেকে বীজধান কিনতে তিন দিন এখানে এসেছেন। কিন্তু প্রতিদিন একই কথা শুনিয়েছেন কেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। চরশ্রীরামপুর গ্রামের জুলহাস উদ্দিন সরকার বলেন, ‘বিক্রয়কেন্দ্রে এসে আমরা বীজধান পাই না। অথচ আমাদের এলাকায় চড়া মূল্যে পানের দোকানেও বিএডিসির বীজধান বিক্রি হচ্ছে। এসব অনাচার দেখার দায়িত্ব কার?’
বেলা সাড়ে ১১টার সময়ে ওই কৃষকেরা একজোট হয়ে বিএডিসি বীজ বিক্রয়কেন্দ্রটির কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবীরের খোঁজ করতে থাকেন। তাঁকে কার্যালয়ে না পেয়ে অফিস সহকারী কামাল উদ্দিনের ওপর চড়াও হন তাঁরা। ক্ষুব্ধ কৃষকদের কেউ কেউ কামালকে ভেতরে রেখে কেন্দ্রটি তালাবদ্ধ করে দেওয়ার কথা চিৎকার করে বলতে থাকেন। এ সময় ভীতসন্ত্রস্ত কামালকে বলতে শোনা যায়, ‘জেলা থেকে বীজ না এলে আমার মতো কর্মচারীর কী করার আছে?’
একপর্যায়ে কৃষকেরা বীজধানের দাবিতে নান্দাইল উপজেলা পরিষদ চত্বরে গিয়ে মানববন্ধন শুরু করেন। এ সময় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মালেক চৌধুরীকে কাছে পেয়ে তাঁরা বীজধানের সংকটের কথা তুলে ধরেন। কিন্তু তিনিও কৃষকদের কোনো আশ্বাস দিতে পারেননি।
মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা বিএডিসি বীজ বিক্রয়কেন্দ্রের কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবীর দাবি করেন, বি-আর ৪৯ ছাড়া অন্য কোনো বীজধানের সংকট নেই। কৃষকদের মধ্যে এ জাতের বীজধানের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। জেলা থেকে অতিরিক্ত বরাদ্দ পেলে তা কৃষকদের সরবরাহ করা সম্ভব হবে। আশপাশের দোকানে চড়া মূল্যে বিএডিসির বীজধান বিক্রির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কেউ কেউ অন্য জায়গা থেকে ওই বীজ সংগ্রহ করে এনে বিক্রি করতে পারেন।
তবে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁরা বিএডিসির বিক্রয়কেন্দ্রে কোনো জাতের বীজই পাচ্ছেন না। অথচ উপজেলার বিভিন্ন ডিলারের কাছে ঠিকই এসব বীজ পাওয়া যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে চড়া দাম দিতে হচ্ছে।
এ উপজেলা বিএডিসি বিক্রয়কেন্দ্রের পাশের দুজন ডিলারের কাছে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা মিলল। এ দুজন ডিলার হলেন আবদুর রাশিদ ও আবদুল কাদির। দুজনের দোকানেই বিএডিসির বীজধান বিক্রি হতে দেখা গেল। তবে দুজনই দাবি করেন, তাঁরা পাশের কিশোরগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে এসব বীজ কিনে এনে বিক্রি করছেন।
অনুমোদিত ডিলার ছাড়া অন্য দোকানে চড়া মূল্যে বিএডিসির বীজধান বিক্রির অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি বিভাগের মনিটরিং (তদারকি) কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘বীজ উৎপাদন ও বিক্রির দায়িত্ব বিএডিসির। বিষয়টি তারাই দেখভাল করে। তবে আমরা বিষয়টি মনিটরিং করছি। কিছু দোকানকে জরিমানা করা হচ্ছে।’ তবে এ পর্যন্ত কতগুলো দোকানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তিনি দিতে পারেননি।