মানুষের হাতই যখন চাবি

হাতই যখন চাবি

কখনো কি ভেবে দেখেছেন যে বন্ধ দরজার সামনে হাত মেলে ধরে ওই দরজা খুলে আপনি ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়ছেন? কিম্বা স্টিয়ারিং-এ হাত ছুঁইয়ে দিয়ে স্টার্ট দিচ্ছেন গাড়ি?

এসবের জন্যে আপনার আর কোন চাবির দরকার হচ্ছে না। শুনতে সায়েন্স ফিকশনের মতো শোনালেও এটাকেই বাস্তব করেছেন বিজ্ঞানীরা।

চাবি নিয়ে আমরা প্রায়শই ঝামেলায় পড়ি। কখনো হারিয়ে ফেলি। কিম্বা কোথায় রেখেছি হয়তো খুঁজেই পাই না। সেটা খুঁজতে গিয়ে সারা ঘর তছনছ করে ফেলি। এই চাবি নিয়ে আমাদের মানসিক চাপের মধ্যেও থাকতে হয়।

কিন্তু এখন আর এই চাবি নিয়ে খুব বেশি ভাবতে হবে না। একজন মানুষ নিজেই হয়ে উঠতে পারবেন নিজের ঘরের, অফিসের কিম্বা গাড়ির চাবি।

আর এটা সম্ভব হতে হাতের তালুতে ছোট্ট একটি মাইক্রোচিপ বসিয়ে দিলেই।

ব্রিটিশ একজন বিজ্ঞানী স্টিফেন নরথ্যাম এই প্রযুক্তিটি উদ্ভাবন করেছেন। তিনি এখন অপেক্ষা করছেন মানুষের শরীরে অপারেশনের মাধ্যমে এই চিপ ঢুকিয়ে দেওয়ার অনুমতির জন্যে।

তিনি বলেন, “কুকুর বিড়ালের শরীরে এই মাইক্রোচিপ্সের ব্যবহার বহু বছর ধরেই চলছে। এখন আমরা এমন এক প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যাচ্ছি যে ধারণা করছি এই প্রযুক্তি এখন মানুষের শরীরেও ব্যবহার করতে পারবো।”

“এই অনুমতিটা পেয়ে গেলেই মানবদেহে চিপ বসানোর দরজাটা খুলে যাবে। তখন দরজা খোলা, গাড়ি স্টার্ট দেওয়া এসব নিয়ে চাবি সাথে রাখার ঝামেলাই আর থাকবে না।”

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এটা করা হবে কিভাবে?

“এই প্রক্রিয়াটি খুব সহজ। সময়ও লাগবে খুব কম। মাইক্রোচিপ বসানোর কাজটা করা হবে একজন ডাক্তারের মাধ্যমে। চেতনা-নাশক ওষুধের সাহায্যে প্রথমে হাতটাকে অবশ করা হবে। ফলে কোন ধরনের ব্যথা থাকবে না। এটা অনেকটা নাক ও কান ফুটানোর মতো।”

তিনি বলেন, “চিপটা হাতের চামড়ার নিচে ঢুকাতে সময় লাগবে মাত্র ৩০ সেকেন্ডের মতো।”

এখানে একটা ভয়ের ব্যাপার হয়তো থাকতে পারে। এই চিপ দিয়ে কি তাহলে মানুষটাকে অনুসরণ করা সম্ভব? বিজ্ঞানী স্টিফেন নর্থহ্যাম বলছেন, এটা সম্ভব নয়।

“কারণ চিপটি সম্পূর্ণ অচেতন বা জড় একটি পদার্থ। ফলে এর সাহায্যে কাউকে ট্র্যাক করা যাবে না।”

“অনেকেই আশঙ্কা করছেন, তাহলে কি এই হাত সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে যেতে পারে। তারা চাইলে কি আমার হাত নাড়াতেও পারবে? না, সেরকম কিছু হবে না।”

“ওই চিপের মধ্যে থাকবে মৌলিক কিছু তথ্য। থাকবে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যগত কিছু তথ্য, ওই ব্যক্তির ব্যক্তিগত তথ্য, ব্যাঙ্কের তথ্য ইত্যাদি। চাইলে আপনি আপনার হাতকে একটি ব্যাঙ্ক কার্ড হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন।”

বিজ্ঞানীরা বলছেন, ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ডে যে ধরনের প্রযুক্তি থাকে মানুষের হাতে বসানো মাইক্রোচিপটিতেও থাকবে ওই একই প্রযুক্তি। ফলে দোকানে গিয়ে মেশিনে শুধু হাত ছুঁইয়ে দিয়েই আপনি মূল্য পরিশোধ করতে পারবেন।