সেনাবাহিনীতে চাকরি দেওয়ার নামে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে গাজীপুরে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এঁদের মধ্যে তিনজন নিজেদের সেনাবাহিনীর মেজর ও সেনাসদস্য হিসেবে পরিচয় দিতেন।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ তাঁর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান। এ সময় জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রাসেল শেখ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গোলাম সবুর, জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আমিনুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
গ্রেপ্তার চারজন হলেন সেনাবাহিনীর মেজর পরিচয় দেওয়া ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার মহির খারুয়া এলাকার শাকিব হাসান লিটন ওরফে সাহাজ্জল হোসেন লিটন ওরফে মেজর নাইম (৪৯), মেজরের পিএ পরিচয় দেওয়া দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার বাওপুকুর এলাকার মো. মঞ্জুর হোসেন ওরফে মঞ্জু ওরফে আরিফ হোসেন (৩৬), সেনাবাহিনীর ওয়ারেন্ট অফিসার পরিচয় দেওয়া নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার মইশাপাড়া এলাকার এমদাদুল ইসলাম ওরফে আকাশ ওরফে এনায়েত (৩৪) ও সেনাবাহিনীর অফিস সহকারী পরিচয় দেওয়া মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার আবদুল্লাহপুরের আবদুর রাজ্জাক ওরফে নজরুল ওরফে লাদেন (৪৫)।
পুলিশ সুপার জানান, গতকাল বুধবার বিকেলে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বোর্ডবাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রথমে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী অন্য দুজনকে গাজীপুর সিটির চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার শাপলা ম্যানসনের সামনে থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাঁদের হেফাজতে থাকা ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট থানাধীন মানিকদী এলাকা থেকে দুই সেট সেনাবাহিনীর ইউনিফর্ম, এক সেট মেজর র্যাংক ব্যাচ, এক জোড়া বুট, সেনাবাহিনীর লোগোযুক্ত মোজা, সেনাবাহিনীর সিল, প্রার্থীদের নিয়োগপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী উদ্ধার করে জব্দ করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, তাঁরা সবাই আগে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পদে চাকরি করতেন। এর মধ্যে নাইম সেনাবাহিনীর সাবেক সার্জেন্ট, এমদাদ সাবেক করপোরাল, মঞ্জু সাবেক মেস ওয়েটার ছিলেন। সেই সূত্র ধরেই তাঁরা প্রতারণার এই পথ ঠিক করেন।
পরে গাজীপুরের ভবানীপুর, বোর্ডবাজার, রাজধানীর মাটিকাটা ও শনির আখড়া এলাকায় নিজেদের অস্থায়ী কার্যালয় তৈরি করেন চক্রের সদস্যরা। সপ্তাহের বিভিন্ন দিনে ওই সব অফিসে নাইম সেনাবাহিনীর পোশাক পরে মেজর পরিচয়ে বসতেন। তাঁদের লোকজন বিভিন্ন জেলা থেকে দালালের মাধ্যমে সেনাবাহিনীতে চাকরিপ্রত্যাশীদের নিয়ে ওই সব অফিসে যেতেন। পরে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পদে চাকরির নিয়োগপত্র দিতেন। কিন্তু চাকরিপ্রত্যাশীরা নিয়োগপত্র পাওয়ার পর চাকরিতে যোগদান করতে গেলে তাঁদের কৌশলে ১০ থেকে ১৫ দিনের ছুটি দিয়ে তাঁরা সেই অফিস গুটিয়ে গা ঢাকা দিতেন।
পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আসা সিরাজগঞ্জের সবুজ মোল্লা মালি পদের জন্য ছয় লাখ, একই জেলার আবদুস সাত্তার আহমেদ ইউডি পদের জন্য আট লাখ টাকা ওই চক্রকে দিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের জানান। দুপুরে এই চক্রের প্রতারণার শিকার বিভিন্ন জেলার আরো চার চাকরিপ্রত্যাশী পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে যান। সেখানে তাঁরা নিজেদের প্রতারিত হওয়ার ঘটনার বর্ণনা দেন।
এসব ঘটনায় আজ দুপুরে জয়দেবপুর থানায় মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপপরিদর্শক (এসআই) নুরুল ইসলাম। তাঁকে এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে।
এসআই নুরুল ইসলাম জানান, মানিকগঞ্জের দৌলতপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. মতিউর রহমানও ওই চক্রের প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তিনি তাঁর ইউনিয়নের আটজনকে সেনাবাহিনীতে চাকরি দেওয়ার জন্য ৫২ লাখ টাকা আদায় করে ওই চক্রের হাতে তুলে দিয়েছেন। পরে তিনি প্রতারকদের খপ্পরে পড়ার বিষয়টি বুঝতে পারেন। তিনিও এই চক্রকে খুঁজছিলেন।
জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আমিনুল ইসলাম জানান, এ প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ আছে। এঁরা ব্যাংক থেকে টাকা তুলে আনা লোকজনকে কৌশলে তাঁদের গাড়িতে উঠিয়ে র্যাব বা ডিবি পরিচয় দিয়ে টাকা ছিনতাই করে অন্যত্র নামিয়ে দিয়ে চলে যেতেন।