সিটিং সার্ভিসের নৈরাজ্য বন্ধে যাত্রীকল্যাণ সমিতির ১২ দফা সুপারিশ

ঢাকা মহানগরীর যাত্রীরা বাস-মিনিবাসে সিটিং সার্ভিসের নৈরাজ্যের শিকার হচ্ছেন। ভাড়া নৈরাজ্য ও পিকআওয়ারে দরজা বন্ধ করে বাসচলাচলের কারণে মাঝপথের যাত্রীরা রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে পুড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকে গাড়ি পাচ্ছেন না। একই দূরত্বে একেক বাসে একেক হারে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। আবার সিটিং সার্ভিস গাড়ির গায়ে লিখে সরকার নিধার্রিত ভাড়ার দিগুণ, তিনগুণ- কোন কোন ক্ষেত্রে ৫ গুণ পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া আদায় করার পাশাপাশি বাদুড়ঝোলা করে যাত্রীও বহন করা হচ্ছে। একদিকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য, অন্যদিকে অতিরিক্ত যাত্রী বহন, তথা এইসব সিটিং গাড়িতে দাঁড়িয়ে যাত্রী বহনের কারণে যাত্রী, চালক ও পরিবহন শ্রমিকদের সাথে প্রায়ই কথা কাটাকাটি, হাতাহাতি-মারামারির ঘটনাও ঘটছে। কিছুদিন যাত্রীরা  প্রতিবাদ করলেও প্রশাসন, মালিক ও শ্রমিক সংগঠন, বিআরটিএ বা পুলিশ কারো কোন সহযোগিতা না পেয়ে এক সময় এই নৈরাজ্যর কাছে যাত্রীরা আত্বসমর্পণ করতে বাধ্য হচ্ছে।
রবিবার জাতীয়  প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির আয়োজিত “সিটিং সার্ভিসের নামে নৈরাজ্য ও যাত্রী হয়রানী বন্ধে” করণীয় শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এইসব কথা উঠে এসেছে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে এ বৈঠকে বক্তব্য রাখেন, বিআরটিএ এর সাবেক চেয়ারম্যান আইয়ুবুর রহমান, ডিটিসিএ এর সাবেক নিবার্হী পরিচালক ড. সালেহ উদ্দীন আহমেদ, দৈনিক সমকালের সহযোগী সম্পাদক ও সিটিং সার্ভিসের নৈরাজ্য বন্ধে সরকার গঠিত কমিটির সদস্য অজয় দাশ গুপ্ত, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কুদ্দুস আফ্রাদ, বুয়েটের অধ্যাপক ড. মাহবুবুল আলম তালুকদার, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক হুমায়ুন কবির হিরু, সমাজ সেবা অধিদফতরের সাবেক উপ-পরিচালক হারুন অর রশিদ, সমাজতান্তিক শ্রমিক ফ্রন্ট এর নারী বিষয়ক সদস্য সামশুন্নাহার প্রমুখ।
আলোচনা সভায় বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে সিটিং সার্ভিসের নৈরাজ্য বন্ধে ১২ দফা সুপারিশ করা হয়। ১. সরকার নির্ধারিত ভাড়ায়, নির্ধারিত স্টপেজ অনুযায়ী সিটিং সার্ভিস বাস চালাতে হবে। ভাড়ার অংক ও দূরত্ব উল্লেখ করে টিকিট দিয়ে ভাড়া আদায় নিশ্চিত করতে হবে। সুস্পষ্ট ভাড়ার তালিকা বাসে ও বাস কাউন্টারে প্রর্দশনের ব্যবস্থা থাকতে হবে। ২. সিটিং সার্ভিসে মালিকদের মর্জি মতো ভাড়া আদায় ও স্টপেজ নির্ধারণ করা যাবে না। মাঝপথের যেকোন স্টপেজে নামলে শেষ গন্তব্য পর্যন্ত ভাড়া আদায় করা যাবেনা। কয়টি স্টপেজ থাকবে যা সরকার-মালিক-শ্রমিক-যাত্রী প্রতিনিধির সাথে আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করতে হবে। ৩. মালিকগণের চালকদের নিকট দৈনিক চুক্তিতে বাস ইজারা দেয়া যাবেনা। ৪. প্রতিটি  সিটিং সার্ভিসের বাসের আসন থাকবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন, বাহ্যিক দিক থেকে দেখতে দৃষ্টি নন্দন। ৫. প্রতিটি সিটিং সার্ভিস বাসে নিবন্ধনে অনুমোদিত আসনের অতিরিক্ত আসন থাকতে পারবেনা। আসন আরামদায়ক হতে হবে। ৬. প্রতিটি সিটিং সার্ভিস বাসে নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী যাত্রী ও অসুস্থ যাত্রীদের উঠানামায় অগ্রাধিকার দিতে হবে। তাদের জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক আসন সংরক্ষণ করতে হবে। ৭. ঢাকা শহরের চলাচলরত মোট বাসের ২৫ শতাংশ সিটিং সার্ভিস হিসেবে চলাচল করতে পারে। এইসব বাস হবে মানসম্মত। সিটিং সার্ভিসের অনুমোদন নেই এমনবাস সিটিং হিসেবে চালালে আটক করার বিধান করতে হবে। আইন অমান্যকারী পরিবহন মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। ৮.সিটিং সার্ভিসের বাসের আলাদা কালার থাকতে হবে। ৯. সিটিং সার্ভিসের বাসে নির্ধারিত স্টপেজের বাইরে রাস্তার মাঝ পথ থেকে যাত্রী নিতে পারবে না। দাঁড়িয়ে যাত্রী নেওয়া নিষিদ্ধ করতে হবে। ১০. সিটিং সার্ভিসের বাস রুট পারমিটের শর্তানুযায়ী চলাচল নিশ্চিত করতে হবে। ১১. যাত্রী সেবার মানোন্নয়নে সরকার-মালিক-শ্রমিক-যাত্রী প্রতিনিধির সমন্বয়ে মনিটরিং কমিটি গঠন করতে হবে। গঠিত কমিটির সিদ্ধান্ত কতটা বাস্তবায়ন হলো নির্দিষ্ট সময় পরপর গণশুনানির আয়োজন করতে হবে। ১২. সিটিং সার্ভিসের বাস মিনিবাসের জন্য রুট ফ্রেঞ্চাইজের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিটি রুটে একই কোম্পানির আওতায় এক টিকিটে যাত্রী পরিবহন নিশ্চিত করতে হবে। লোকালবাসে ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে বাঁদুড়ঝোলা করে যাত্রী বহন করা যাবে না। এইজন্য বাসের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে।