বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) গতকাল মঙ্গলবার কামরাঙ্গীরচরে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে গড়ে তোলা কিছু অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে। অভিযানে নেতৃত্ব দেন বিআইডব্লিউটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাহাত মান্নান।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, অভিযানে পাঁচটি করাতকল, দুটি আধা পাকা ভবন, একটি সীমানা দেয়াল ও তিনটি টংঘর উচ্ছেদ করা হয়। এ ছাড়া তিনটি দোতলা ও একটি সাততলা ভবনের আংশিক উচ্ছেদ করা হয়েছে। অভিযানে নদীর সীমানা পরিমাপ করে সীমানা নির্ধারণী ১০টি খুঁটি পুনঃস্থাপন করে লাল পতাকা টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, গতকাল বেলা ১১টার দিকে নবাবচর মৌজার মুন্সিহাটি এলাকায় সিরাজউদ্দিন মিয়া নামের এক ব্যক্তির দুটি পাকা ভবনের অবৈধ অংশ উচ্ছেদের মাধ্যমে অভিযান শুরু হয়।
ভবনের মালিক সিরাজউদ্দিনের দাবি, ১৯৯০ সালে ৪৮ শতাংশ জমি কিনে তিনি দুটি দোতলা ভবন নির্মাণ করেছেন। কিন্তু সরকার তাঁদের জমিতে নির্মাণ করা ভবনের একাংশ ভেঙে দিয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, সিরাজউদ্দিনের ভবনের অবৈধ অংশ ভাঙার পর খোলামুড়া ঘাটসংলগ্ন এলাকায় হিলফুল ফুজুল নামের একটি কোম্পানির সাততলা ভবনের অবৈধ অংশ ভেঙে দেওয়া হয়।
হিলফুল ফুজুলের বিপণন কর্মকর্তা মো. আনসার আলী বলেন, ‘আমাদের কোম্পানির অংশীদার মো. রফিকুল ইসলাম তিন বছর আগে সাত কাঠা জমি কিনে সাততলা ভবন নির্মাণ করেছেন। অথচ সরকার এই জমির প্রায় ৫০ ফুট অংশ নদীর জায়গা দাবি করে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে।’
বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আশ্রাফাবাদ এলাকায় নদীর তীরে গড়ে তোলা মদিনা ট্রেডিং করপোরেশনের টাইগার সিমেন্টের রেডিমিক্স কারখানার স্থাপনা ও প্রদর্শনী কেন্দ্রের অবৈধ অংশ উচ্ছেদ করতে যান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এ সময় মদিনা ট্রেডিংয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ম্যাজিস্ট্রেটকে তাঁদের স্থাপনা উচ্ছেদ না করতে বারবার অনুরোধ করেন। একপর্যায়ে প্রতিষ্ঠানটির সীমানা দেয়াল এক্সকাভেটরের সাহায্যে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাহাত মান্নান বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশে নদীর জায়গায় ও নদীর তীরভূমিতে অবৈধভাবে গড়ে তোলা স্থাপনা উচ্ছেদে গতকাল অভিযান চালানো হয়েছে। তিনি বলেন, নদীর জায়গায় গড়ে তোলা স্থাপনা নিজেদের উদ্যোগে ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে সরিয়ে নেওয়া হবে বলে মদিনা ট্রেডিংয়ের পক্ষ থেকে লিখিত অঙ্গীকার করা হয়েছে। তাই ওই প্রতিষ্ঠানের শোরুমসহ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করা হয়নি।
মদিনা ট্রেডিংয়ের কর্মকর্তা নাজিম উদ্দিন জোয়ারদার বলেন, ২০০৯ সালে তাঁদের প্রতিষ্ঠান ১০৭ শতাংশ জমি কিনে এখানে ব্যবসা পরিচালনা করছে। তাঁরা খাজনা পরিশোধ করছেন। অথচ বিআইডব্লিউটিএ তাঁদের জমিকে নদীর জায়গা বলছে। বিষয়টি তাঁরা বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তা ও ম্যাজিস্ট্রেটকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন; কিন্তু তাঁরা তা না শুনে সীমানাপ্রাচীর ভেঙে দিয়েছেন।
বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক গোলজার আলী বলেন, নদীর তীরে যেসব অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে, সেগুলো পর্যায়ক্রমে উচ্ছেদ করা হবে।
অভিযানের সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা নদীবন্দরের উপপরিচালক মিজানুর রহমান ও সহকারী পরিচালক নূর হোসেন।