ফেসবুকে ভাইরাল ট্রাকে পিষ্ট হওয়া সেই কলেজছাত্র এখন ঢাকা মেডিকেলে

রাজধানীর শনিরআখড়া ওভারব্রিজের নিচে পিকআপ চাপায় আহত কলেজছাত্র ফয়সাল ভালো আছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।

বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় আজ বুধবার সকাল থেকেই বিক্ষোভ করছিল শিক্ষার্থীরা। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে শনিরআখড়ায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের সময় ফয়সালের ওপর দিয়ে একটি পিকআপ ভ্যান উঠিয়ে দেয়।

আহত ফয়সাল নারায়ণগঞ্জের সরকারি তোলারাম কলেজের ছাত্র। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

ঘটনার পর ফয়সালকে উদ্ধার করে প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জের প্রোঅ্যাকটিভ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানকার অর্থপেডিক্সের চিকিৎসক ডা. এ টি এম বাহার উদ্দিন জানান, ফয়সালের অবস্থা আশঙ্কামুক্ত, তবে তাঁর কোমরের বাঁ দিকে ফ্র্যাকচার আছে। চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, অস্ত্রোপচার প্রয়োজন নেই। তাঁর প্রস্রাবের ব্ল্যাডারে সমস্যার কারণে ইউরোলজির চিকিৎসক ফয়সালকে দেখে গেছেন। কিছু পরীক্ষা করে প্রস্রাবের থলিতে তাঁর সমস্যা দেখা দিয়েছে। এজন্য দ্রুত তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

বর্তমানে ফয়সাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইউরোলজি বিভাগের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছেন। ওই ওয়ার্ডের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মাসুদ বলেন, ফয়সালের প্রস্রাবের থলেতে রক্তক্ষরণ হয়েছে। আমরা তাঁকে আলট্রাসনোগ্রামসহ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিয়েছি। বিস্তারিত পরে জানা যাবে, তাঁর চিকিৎসা চলছে।

আজ বুধবার সকাল থেকেই ফেসবুকে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। বিভিন্ন পোস্টে বলা হয়, রাজধানীর শনিরআখড়া ও দনিয়া এলাকায় শিক্ষার্থীরা লাইসেন্সবিহীন গাড়ি আটকে দিচ্ছিল। ভিডিওতে দেখা যায়, একটি পিকআপকে আটকানোর চেষ্টা করছে ছাত্ররা। একপর্যায়ে সামনে থাকা এক ছাত্রের ওপর দিয়ে গাড়ি উঠিয়ে দেয় চালক। এরপর পিকআপটি দ্রুত ওই স্থান থেকে চলে যায়।

যাত্রাবাড়ী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বিল্লাল হোসেন জনি জানান, সকালের একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ায় উদঘাটনের জন্য মাঠে নামে পুলিশ । পরে সংবাদ পাওয়া যায় আহত ছাত্র ফয়সাল সিদ্ধিরগঞ্জের প্রোঅ্যাকটিভ হাসপাতালে ভর্তি আছে। পরে ওই হাসপাতাল ছুটে যায় পুলিশ। এ ছাড়া পিকআপ গাড়িটি ধরতে পুলিশ মাঠে কাজ করছে বলে জানান এসআই।

গত ২৯ জুলাই রাজধানীর কুর্মিটোলার বিমানবন্দর সড়কে জাবালে নূর পরিবহনের বাসের চাপায় দুই কলেজ শিক্ষার্থী নিহত হয়। এ ছাড়া আহত হয়েছে বেশ কয়েকজন। নিহত শিক্ষার্থীরা হলো শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী দিয়া খানম মিম ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম।

এ ঘটনায় পুরো ঢাকা উত্তাল। টানা চতুর্থদিনের মতো আজ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।

সড়কগুলোর মোড়ে মোড়ে বাস, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেলগুলো থামায় শিক্ষার্থীরা। চালকের কাছে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখতে চায়। লাইসেন্স থাকলে গাড়ি ছাড়ে, নয়তো আটকে রাখে, নতুবা পুলিশের কাছে দিয়ে দেয়। উল্টো পথে আসা গাড়িগুলোও তারা ফিরিয়ে দেয়।

কুর্মিটোলায় বিমানবন্দর সড়কের যে স্থানে শহীদ রমিজ উদ্দিন কলেজের দুই ছাত্রছাত্রী নিহত হয়েছিল আজ বুধবার বিকেলে সে স্থান থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে ‘সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ ছাত্র আন্দোলন’। তারা আগামীকাল বৃহস্পতিবার সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও স্কুলগুলোতে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধনের ডাক দেয়।