গুলিস্তান ট্রেড সেন্টারের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগে জায়গা দখল করে নেওয়া দোকানিদের উচ্ছেদে অভিযান শুরু করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। তবে এই মার্কেটের পার্কিংয়ের অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করা হয়নি।
গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন ডিএসসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খান মোহাম্মদ নাজমুস শোয়েব ও ইলিয়াস মিয়া।
খান মোহাম্মদ নাজমুস শোয়েব বলেন, প্রথম দিনের অভিযানে দেড় শতাধিক দোকান ও গুদাম উচ্ছেদ করা হয়েছে। উচ্ছেদ অভিযান শেষ হতে আরও কয়েক দিন লাগতে পারে।
গুলিস্তান ট্রেড সেন্টার গুলিস্তান পুরান বাজার হকার্স মার্কেট ও পোড়া মার্কেট নামে পরিচিত।
২০০৩ সালে এই বিপণিবিতানের নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রস্তাবিত ১২ তলার এই বিপণিবিতানে ১ হাজার ৬৪৬টি দোকান তৈরির কথা ছিল। ২০০৪ সাল থেকে নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে।
ডিএসসিসির সম্পত্তি বিভাগের একটি সূত্র জানায়, বিল নিয়ে ঝামেলার সূত্র ধরে ঠিকাদার কাজ বন্ধ রেখেছেন। এ নিয়ে মামলা চলছে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রায় ছয় মাস আগে গুলিস্তান ট্রেড সেন্টারের পার্কিংয়ের দোকানপাট উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত। চার দিন আগে আদেশের সত্যায়িত অনুলিপি পায় ডিএসসিসি। এরপর গতকাল অভিযান চালানো হয়। অভিযানের শুরুতে বিপণিবিতানের দোকানিরা দাবি করেন, পার্কিংয়ের দোকানপাট উচ্ছেদ বন্ধে নির্দেশনা চেয়ে তাঁরা আদালতে আবেদন করেছেন। এরপর পার্কিংয়ের দোকানপাট উচ্ছেদ বন্ধ করে নিচতলা ও দোতলায় অভিযান শুরু করা হয়।
গুলিস্তান ট্রেড সেন্টারের পার্কিংয়ে প্রায় সাড়ে তিন শ কাপড়ের দোকান আছে। প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় ছাদ ঢালাই করা। এর মধ্যে টিনের বেড়া দিয়ে আরও তিন শতাধিক পোশাকের দোকান ও গুদাম নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া দ্বিতীয় তলার ছাদে টিন দিয়ে তৈরি করা হয়েছে আরও শতাধিক গুদাম। পার্কিংয়ে থাকা বিভিন্ন দোকানের মালিকেরা এসব গুদামে মালামাল রাখেন।
গতকাল সকাল ৯টায় এই বিপণিবিতানে অভিযান শুরুর কথা থাকলেও শুরু হয় বেলা ১১টার দিকে। এর আগে সকাল থেকে মার্কেটের সামনে গুলিস্তান-সদরঘাট সড়কের একাংশে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন বিপণিবিতানের দোকানিরা। এ সময় এই সড়কে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। সকাল সাড়ে ১০টার সময় তাঁদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয় পুলিশ।
বেলা ১১টার দিকে ডিএসসিসির ম্যাজিস্ট্রেট খান মোহাম্মদ নাজমুস শোয়েব ও ইলিয়াস মিয়ার নেতৃত্বে অভিযান শুরু হয়। অভিযানে ডিএসসিসির সম্পত্তি বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ শতাধিক শ্রমিক অংশ নেন। অভিযানের শুরুতে মার্কেটের বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। এ সময় নিজ নিজ দোকানের মালামাল সরিয়ে নিতে থাকেন দোকানিরা। পার্কিংয়ে থাকা প্রায় ৮০ শতাংশ দোকানের মালামালও সরিয়ে নেওয়া হয়। এর মধ্যে বিপণিবিতানের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার টিনের বেড়া ভাঙতে থাকেন ডিএসসিসির কর্মচারী ও শ্রমিকেরা। এভাবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে দেড় শতাধিক দোকানপাট উচ্ছেদ করা হয়। তবে পার্কিংয়ের দোকানপাট ভাঙা হয়নি।
গুলিস্তান ট্রেড সেন্টারের দোকান মালিক সমিতির সভাপতি জি এম আতিকুর রহমান বলেন, প্রায় ১৪ বছর আগে দোকান বরাদ্দ বাবদ দোকানিদের কাছ থেকে ৩৪ কোটি টাকা নিয়েছে ডিএসসিসি। কিন্তু এখনো তাঁদের দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। দোকান বুঝিয়ে দিলে তাঁরা পার্কিং ছেড়ে দেবেন। তিনি বলেন, পার্কিং থেকে দোকান উচ্ছেদ না করতে উচ্চ আদালতের নির্দেশ আছে। বিপণিবিতানের বাকি অংশ থেকে দোকানপাট উচ্ছেদে তাঁদের কোনো আপত্তি নেই।
ডিএসসিসির ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও ভারপ্রাপ্ত মেয়র ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, বিপণিবিতানের দোকানিদের ৯০ শতাংশই অবৈধ দখলদার। যে যেভাবে পেরেছেন, অবৈধভাবে জায়গা দখল করে রেখেছেন। তিনি বলেন, পার্কিং থেকে দোকান উচ্ছেদ না করতে উচ্চ আদালতের নির্দেশ আছে বলে দোকানিরা যে দাবি করেছেন, সে ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হবে। তাঁদের দাবি মিথ্যা হলে বুধবারই পার্কিংয়ে অভিযান চালানো হবে। তবে মার্কেটের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার বাকি দোকানপাট উচ্ছেদে অভিযান চলবে।
ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, শিগগিরই মার্কেটের নির্মাণসংক্রান্ত জটিলতা মিটিয়ে বাকি কাজ শেষ করা হবে। প্রকৃত দোকানিদের কাছে তা বুঝিয়ে দেওয়া হবে।