সুনামগঞ্জের ধরমপাশা উপজেলার দক্ষিণউড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের কাজ দুই বছরেও শেষ হয়নি। ছয় মাস ধরে এর নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে স্থানীয় একটি আশ্রমের কীর্তন অনুষ্ঠানের জায়গায় শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। সেখানে চারদিক খোলা থাকায় বৃষ্টিতে শিক্ষার্থীরা ভিজে যায়। এ ছাড়া মনোযোগও ব্যাহত হয়। ফলে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।
উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডির) অধীনে পিইডিপি-৩ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার বংশীকুণ্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের দক্ষিণউড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০১৫ সালের জুনে। নূরা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি পায়। এতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৪৯ লাখ টাকা। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে কাজটি শেষ হওয়ার কথা।
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণউড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে ১৯৬১ সালে। বর্তমানে চারজন শিক্ষক ও ১৩৯ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ ২০১৩ সালের জুনে বিদ্যালয়ের পুরোনো পাকা ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। তখন দক্ষিণউড়া গ্রামের একটি বাড়িতে টিনের একটি ঘর নির্মাণ করে শিক্ষা কার্যক্রম চলছিল। কিন্তু বাড়ির মালিক নতুন ভবন নির্মাণ শুরু করায় ওই টিনের ঘরটি ভেঙে ফেলা হয়। এরপর দক্ষিণউড়া শ্রীশ্রী রাধাগোবিন্দ আশ্রমের কীর্তনের অনুষ্ঠানস্থলে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হচ্ছে।
৬ জুলাই দুপুরে ওই আশ্রমে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ৩০-৩৫ জন শিক্ষার্থীকে পাশাপাশি বেঞ্চে বসিয়ে পাঠদান চলছে। কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, বৃষ্টি এলে তাদের বইপত্র ও কাপড় ভিজে যায়। তারা দ্রুত নতুন ভবনে ক্লাস করতে চায়।
নির্মাণাধীন ভবনে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের বারান্দার মেঝের পশ্চিম অংশ ভেঙে দেবে গেছে। সিঁড়ি ভেঙে গেছে।
প্রধান শিক্ষক সুকুমার তালুকদার বলেন, ‘ছয় মাস ধরে ভবন নির্মাণের কাজ বন্ধ রয়েছে। নিরূপায় হয়ে গ্রামের আশ্রমে পাঠদান চলছে। ঠিকাদারের লোকজন পুরোনো ভবনটি ভেঙে নিয়ে গেছে। কোনো নিলাম হয়েছে কি না, আমি জানি না।’
বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি প্রাণেশ চন্দ্র রায় বলেন, ‘তদারকি না থাকায় যেনতেনভাবে ভবনের নির্মাণকাজ করা হয়েছে। কাজ শেষ হওয়ার আগেই বিদ্যালয় ভবনের সিঁড়ি ও বারান্দার মেঝে ভেঙে গেছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি লিখিতভাবে জানিয়েছি। পুরোনো ভবনটি ভেঙে নেওয়ার ব্যাপারে আমাকে কিছুই জানানো হয়নি।’
ঠিকাদার নাদির আহমেদ বলেন, ‘ভবন নির্মাণে কোনো অনিয়ম হয়নি। আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। বিদ্যালয়ের পুরোনো ভবনটি গ্রামবাসী ভেঙে নিয়ে গেছে। আমি ফাঁকা স্থানে নতুন ভবন নির্মাণের কাজ করেছি। পুরো বিল উত্তোলন করিনি। এটি সংশোধনের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছি। অনুমোদন হলে অবশিষ্ট কাজ সম্পন্ন করে দেওয়া হবে।’
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রোকেয়া আক্তার খাতুন বলেন, ‘নতুন ভবনের নির্মাণকাজ সম্পন্ন করে দ্রুত বিদ্যালয়টি হস্তান্তরের জন্য উপজেলা প্রকৌশল বিভাগে একাধিকবার বলেছি। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না।’
উপজেলা প্রকৌশলী আবদুল ওয়াদুদ বলেন, এ সমস্যার সমাধানে খুব শিগগির প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
নির্মাণকাজও বন্ধ ছয় মাস, আশ্রমে পাঠদান
