বরিশালের উজিরপুর উপজেলায় মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন হতদরিদ্র মায়ের জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদান প্রকল্পের তালিকা তৈরিতে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া তালিকা তৈরির পর কার্ড দেওয়ার সময়ও টাকা আদায় করা হচ্ছে।
মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর উজিরপুরের ৯টি ইউনিয়নে ৮০ জন করে মোট ৭২০ জন দরিদ্র গর্ভবতী মাকে ভাতা প্রদানের জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। কর্মসূচির আওতায় প্রত্যেককে ৫০০ টাকা করে দুই বছর মেয়াদে ১২ হাজার টাকা দেওয়া হবে। এ প্রকল্পে ৮৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী, প্রতিবন্ধী, অসহায়, স্বামী অক্ষম, বয়স ২০-৩৫ বছরের নিচে, পাঁচ শতকের নিচে জমি থাকা ব্যক্তিরা সরকারি এ সুবিধা পাবেন। তবে দুই সন্তানের অধিক সন্তানের মায়েরা এ সুবিধা পাবেন না।
জল্লা ইউনিয়নের জল্লা গ্রামের করিমন আকতার ও হারতা ইউনিয়নের নাতারকান্দী গ্রামের রমা রানীর নাম এ তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি। তাঁরাসহ কয়েকজন নারী অভিযোগ করেন, তাঁদের মতো হতদরিদ্র অনেকেরই তালিকায় নাম নেই। কিন্তু সচ্ছল পরিবারের অনেক নারী তালিকাভুক্ত হয়েছেন। মূলত ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও সদস্যরা তালিকা তৈরিতে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি করেছেন।
মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের উপজেলা কার্যালয় থেকে পাওয়া তালিকা থেকে দেখা যায়, গুঠিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. হানিফ মোল্লার মেয়ের নাম তালিকায় রয়েছে। যদিও তাঁর বিয়ে হয়েছে বানারীপাড়া উপজেলা সদরের এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে।
এ সম্পর্কে হানিফ মোল্লা বলেন, তিনি তালিকা তৈরি করেননি। তালিকায় তাঁর মেয়ের নাম আছে কি না, তা তিনি জানেন না।
তালিকায় নাম রয়েছে হারতা ইউপির চেয়ারম্যান হরেন রায়ের ভাই সুভাষ রায়ের স্ত্রীর। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুঠোফোনে হরেন রায় বলেন, তালিকা তৈরিতে কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি হয়নি। এ কথা বলেই তিনি ফোন কেটে দেন। পরে ফোন দিলেও আর ধরেননি।
এ ছাড়া গুঠিয়া ও শোলক ইউনিয়নে তালিকা তৈরিতে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তবে এসব ইউপির চেয়ারম্যান তা অস্বীকার করেছেন।
এদিকে গত বুধবার মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের উপজেলা কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, গর্ভবর্তী মায়েদের ভাতার কার্ড বিতরণ করা হচ্ছে। কার্ড দেওয়ার সময় অফিস সহকারী পারভীন খানম ও প্রশিক্ষক জেসমিন বাহার ১০০ টাকা করে আদায় করছেন। শিকারপুর ইউনিয়নের মুণ্ডপাশা গ্রামের রাজু আক্তার রাজিয়া, জান্নাতুল বেগম, খাদিজা আকতার, সীমা আক্তারসহ ১৩ জন সুবিধাভোগী অভিযোগ করেন, অফিস খরচের কথা বলে টাকা নেওয়া হচ্ছে। টাকা না দিলে কার্ড দিচ্ছে না।
টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে অফিস সহকারী পারভীন খানম বলেন, উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা কাজী ইসরাত জাহানের নির্দেশে টাকা আদায় করা হচ্ছে।
এ সম্পর্কে কাজী ইসরাত জাহান বলেন, ‘অফিস সহকারীকে টাকা তোলার নির্দেশ দিইনি। টাকা আদায়ের সত্যতা পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি এখানে যোগ দেওয়ার আগে তালিকাটি হয়েছে। এতে ত্রুটি থাকতে পারে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মাতৃত্বকালীন ভাতার তালিকায় স্বজনপ্রীতি
