অল্প বৃষ্টিতেই ময়মনসিংহ শহরের সব সড়কে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। প্রধান প্রধান সড়কে জমে থাকা পানি দ্রুত কমে গেলেও ছোট সড়কগুলোতে পানি দুই থেকে চার ঘণ্টা থাকে। এতে এসব সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে দুর্ভোগে পড়ে এলাকাবাসী।
শহরের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, ময়মনসিংহে জলাবদ্ধতার এই সমস্যা অনেক বছর ধরে। শহরের চারটি খালের বিভিন্ন অংশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় এ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। বাসাবাড়ির আবর্জনা আটকে শহরের বিভিন্ন স্থানে খালগুলো ভরাট হচ্ছে।
সরেজমিন ও ময়মনসিংহ শহরের বিভিন্ন এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শহরের নতুন বাজার, গাঙ্গিনারপাড়, সানকিপাড়া, পুরাতন ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সড়কগুলোতে মাত্র এক ঘণ্টার ভারী বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। তবে বৃষ্টি থামার কিছু সময়ের মধ্যেই ওই সব সড়কের পানি নেমে যায়।
এ ছাড়া শহরের বিভিন্ন আবাসিক এলাকার ছোট ছোট সড়ক এবং গলিতে মাত্র ৩০ মিনিটের ভারী বর্ষণেই জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এলাকাগুলো হচ্ছে শহরের আকুয়া, নওমহল, লিচুবাগান, সেনবাড়ি, সেহড়া ডিবি রোড, চরপাড়া, নয়াপাড়া, মাসকান্দা, কলেজ রোড ও আউটার স্টেডিয়াম। ওই সব এলাকায় চলতি বর্ষায় একাধিকবার জলাবদ্ধতা দেখা গেছে। ছোট ছোট ওই সব সড়কে বৃষ্টি হওয়ায় ঘর থেকে বের হওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। টানা বৃষ্টি হলে তিন-চার দিন জলাবদ্ধতা থাকে। আবার সামান্য বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার পানি বৃষ্টি থেমে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নেমে যায়। পানি নেমে গেলেও সড়কগুলোতে কাদা হয়। তাতে দুর্ভোগে পড়ে এলাকাবাসী।
ময়মনসিংহ পৌরসভার কর্মকর্তারা দাবি করেন, কয়েক বছরে শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে। আগে বৃষ্টি হলে প্রধান প্রধান সড়কসহ ছোট সড়কের জলাবদ্ধতা দীর্ঘস্থায়ী হতো। বর্তমানে জলাবদ্ধতার স্থায়িত্ব অনেক কমেছে।
পৌরসভা কার্যালয় ও ময়মনসিংহ শহরের বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, শহরের ভেতর দিয়ে সেহড়া খাল, মাকরজানি খাল, গোয়াইকান্দি খাল, বগামারি খাল রয়েছে। চারটি খালই শহরতলির আকুয়া খাল হয়ে সুতিয়া নদীতে মিশেছে। আবর্জনা ফেলার কারণে ওই খালগুলো দিন দিন ভরাট হচ্ছে।
গত সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের নওমহল এলাকায় মাকরজানি খালের ওপর আবর্জনা ভাসছে। ওই এলাকায় একটি কালভার্টে আবর্জনা আটকা পড়েছে। স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, মাত্র ১০ মিনিট ভারী বৃষ্টি হলেই খাল উপচে সড়কে পানি ওঠে। খালের আবর্জনা কালভার্টে আটকে থাকায় পানি সরতে পারে না।
ডিবি রোড এলাকায় সেহড়া খালে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন স্থানে আবর্জনা আটকে রয়েছে। স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, বৃষ্টি হলেও পানি আবর্জনায় আটকে থাকে। এতে সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। সানকিপাড়া, মাদ্রাসা কোয়ার্টার ও লিচুবাগান এলাকার সড়কগুলোও সামান্য বৃষ্টি হলে পানির নিচে তলিয়ে যায়। বগামারি খালের আবর্জনার কারণে ওই সব সড়কের পানি দ্রুত নামতে পারে না।
নতুন বাজার এলাকার হরিজন পল্লির সামনে দিয়ে যাওয়া খালটি সম্পর্কে অরুণ হরিজন নামের এক তরুণ বলেন, তিনি শৈশবে এই খালে সাঁতার কেটেছেন। কিন্তু তিন বছর ধরে খালে নামলে হাঁটুপানিও হয় না। বাসাবাড়ির আবর্জনায় খালটি ভরাট হয়ে গেছে। বৃষ্টি হলে হরিজন পল্লির ঘরগুলোতে পানি ওঠে।
পৌরসভার মেয়র মো. ইকরামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই চারটি খালের পৌরসভার অংশ আমরা প্রতিবছর পরিষ্কার করি। মানুষ খালগুলোতে আবর্জনা ফেলে প্রতিদিন একটু একটু করে ভরাট করে। বিভিন্ন স্থানে আবর্জনা আটকে যাওয়ায় পানি দ্রুত নামতে পারে না। এ কারণে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া খালগুলো পৌরসভার বাইরের অংশে বিভিন্ন স্থানে ভরাট হচ্ছে। ওই অংশগুলো উদ্ধার করতে পারলে জলাবদ্ধতা কমে আসবে। এ ব্যাপারে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।’