দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে মুক্তির আলো দেখল অনুরাগ বসুর লেখা ও পরিচালিত ছবি ‘জাগগা জাসুস’। প্রায় চার বছর লেগে গেল ‘জাগগা জাসুস’ নির্মাণ করতে। রণবীর কাপুর (জাগগা) ও ক্যাটরিনা কাইফ (শ্রুতি সেনগুপ্ত) অভিনীত এই ছবিতে গান আছে মোট ২৯টি। ‘মিউজিক্যাল ড্রামা’ হিসেবে ছবিটিতে গানের আলাদা প্রাধান্য থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। বলিউডে শিশুদের জন্য সেভাবে ছবি নির্মাণ করা হয় না। সেই অভাব থেকেই অনুরাগের ‘জাগগার’ জন্ম।
পরিচালকের দাবি ছিল, খুদে দর্শকদের কথা মাথায় রেখে ‘জাগগা জাসুস’ নির্মাণ করা হয়েছে। ছবির নায়ক জাগগা তোতলা। কথা বলতে গেলেই তার জিব জড়িয়ে যায়। কিন্তু গানের সুরে কথা বলতে সে স্বচ্ছন্দ। তাই জাগগার মুখে কথা কম গান বেশি শোনা গেছে। জাগগা এই শারীরিক অক্ষমতার জন্য সবার থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখে। জাগগার জীবনে একমাত্র বন্ধু ছিল তার বাবা। বাবার চরিত্রে দেখা গেছে কলকাতার অভিনেতা শাশ্বত চ্যাটার্জিকে। বাবা ছেলেকে পরামর্শ দেয় তোতলা বলে জগতের কাছে কুণ্ঠিত হয়ে না থেকে খোলা মনে নিজের কথা বলতে। একদিন এই বাবা তথা পরম বন্ধু জাগগার জীবন থেকে হারিয়ে যায়। কিশোর জাগগার জীবনে অন্ধকার নেমে আসে। বাবার খোঁজে বেরিয়ে পড়ে সে। জাগগার এই সফরে নির্ভেজাল আনন্দের পরতে পরতে লুকিয়ে আছে নানান রহস্য। রহস্যের কিনারা করতে করতে জাগগা এভাবেই জাসুস (গোয়েন্দা) হয়ে ওঠে। ক্যাটরিনাকে এই ছবিতে শ্রুতি সেনগুপ্ত নামের এক বাঙালি সাংবাদিকের চরিত্রে দেখা গেছে।
‘জাগগা জাসুস’ শুধু ছোটদের না, বড়দেরও সমানভাবে উপভোগ করার মতো ছবি। প্রথম দিনে বক্স অফিস সাফল্যে দেখে আশা করা যায়, রণবীরের দুর্দশা অন্তত সালমান খানের ‘টিউবলাইট’-এর মতো হবে না। এই ছবিতে প্রথম দিনের আয় ছিল ৮ কোটি ৫৭ লাখ রুপি। চলচ্চিত্র ব্যবসায়ের সমীক্ষক তরন আদর্শ এই অঙ্কটি টুইট করে জানান। ‘জাগগা জাসুস’ নির্মাণে খরচ পড়েছিল ১১০ কোটি রুপি। এই শুক্রবার ছবিটি মুক্তি পেয়েছে। এখনো তো অনেকটা পথ চলা বাকি। তাই ছবির ভাগ্য এখনই পুরোটা পড়ে ফেলা যাচ্ছে না। খুশির খবর হলো, ভারতে অনুরাগের এই ছবি শুধু ছোটদের নয়, বড়দের মনও জয় করেছে। গোয়েন্দার চরিত্রে রণবীরের অভিনয়ও দারুণ প্রশংসিত হয়েছে। শ্রুতির চরিত্রে ক্যাটরিনাকেও দর্শক ভালোভাবে গ্রহণ করেছেন। তবে প্রায় তিন ঘণ্টা দৈর্ঘ্যের এই ছবি অনেকের কাছেই খুব বিরক্তিকর মনে হয়েছে। কিছু কিছু দর্শক আবার অত্যধিক গানের জন্য ছবিটিকে অপছন্দ করেছেন।
‘জাগগা জাসুস’ কিছু চলচ্চিত্রপ্রেমীর মন জয় করলেও চিত্র সমালোচকদের সমালোচনার শিকার হয়েছে। প্রখ্যাত চিত্র সমালোচক খালিদ মোহাম্মদের মতে, ‘এই ছবি নির্মাণের জন্য লেখক ও পরিচালক অহেতুক সময়, সম্পদ ও পরিশ্রমের অপব্যবহার করেছেন। “জাগগা জাসুস” আশানুরূপ হয়নি।’
অনেকে আবার রণবীর অভিনীত এই ছবিটিকে হলিউড ছবি হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তবে চলচ্চিত্র ব্যবসায়ের সমীক্ষকদের একাংশ ছবিটি দেখে একদমই খুশি নয়। সমীক্ষক কোমল নাহাতা বলেছেন, ‘এই ছবিটি আমার একদমই পছন্দ হয়নি।’ গেইটি গ্যালাক্সি ও মারাঠা মন্দির-এর মালিক মনোজ দেশাই বলেন, ‘শুরুর দিনে আমার প্রেক্ষাগৃহ প্রায় ৯০ শতাংশ ভর্তি ছিল। বলা যায় শুরুর অঙ্কটা ভালোই। তবে আমি আশা করেছিলাম হাউসফুল থাকবে। সোমবার “জাগগা জাসুস” সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে।’ সমীক্ষক আমোদ মেহেরা বলেন, ‘ছবি দেখে আমি খুবই হতাশ। দেখি, সোমবার পর্যন্ত পানি কত দূর গড়ায়। তবে আমি যেন মনেপ্রাণে চাই যে আমি ভুল প্রমাণিত হই।’ জুহু পিভিআর-এর মালিক রবি শিবাল আবার ‘জাগগা জাসুস’-এর ব্যাপারে ভীষণই আশাবাদী।
দেখা যাক, শেষ পর্যন্ত আলোচিত এই ছবি বক্স অফিসে কতটা আশার আলো দেখাতে পারে।