রোহিঙ্গাদের অব্যাহত অনুপ্রবেশে উদ্বিগ্ন কফি আনান

জাতিসংঘের  সাবেক মহাসচিব ও রাখাইন রাজ্যের সঙ্কট নিরসনে মিয়ানমার সরকার গঠিত কমিশনের প্রধান কফি আনান বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের অব্যাহত অনুপ্রবেশে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি এখন পর্যন্ত সঙ্কট অব্যাহত থাকার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

ড. আনান অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধ এবং রাখাইন রাজ্যের উপদ্রুত এলাকাগুলোতে জাতিসংঘ, মানবিক সহায়তা সংস্থা এবং গণমাধ্যমের অবাধ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি মনে করেন, এসব পদেক্ষেপের মাধ্যমে রাখাইন রাজ্যে এখনো অবস্থানরত দুর্গত মানুষের মধ্যে আস্থার মনোভাব তৈরি করা সম্ভব।

সোমবার নিউ ইয়র্কে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সাথে বৈঠককালে কফি আনান এ অভিমত ব্যক্ত করেন। তিনি চলমান পরিস্থিতিতে মানবিক ভূমিকা রাখার জন্য বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের প্রশংসা করেন। ড. আনান চলমান মানবিক বিপর্যয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

রাখাইন রাজ্যের সঙ্কটের ওপর একটি সুদূরপ্রসারী ও গঠনমূলক প্রতিবেদন উপস্থাপনের জন্য কফি আনানকে ধন্যবাদ জানান স্পিকার। তিনি ড. আনানকে এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তার ধারণা ও সুপারিশসমূহ তুলে ধরার জন্য অনুরোধ জানান।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আমন্ত্রণের আলোকে স্পিকার দ্রুত একটি সুবিধাজনক সময়ে ড. আনানকে বাংলাদেশ সফরের অনুরোধ জানান।

রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে জাতিসংঘের আলোচনা : জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা ও জরুরী ত্রাণ বিষয়ক সমন্বয়কারী এবং আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল মার্ক লোকক জাতিসংঘ সদর দফতরে ‘রোহিঙ্গা সঙ্কট ও বাংলাদেশের মানবিক সহযোগিতা’ বিষয়ে একটি আলোচনার আয়োজন করেন। এতে ইউএনএইচসিআর, আইওএম, ইউনিসেফ, ডব্লিউএইচও, রেডক্রস ও রেডক্রিসেন্টের প্রতিনিধিরা ছাড়াও কুয়েত, তুরস্ক, সৌদি আরব, সুইডেন, যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া, সুইজারল্যান্ড, মিয়ানমার, বাংলাদেশ ও ইইউ’র রাষ্ট্রদূতরা বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

স্বাগত বক্তব্যে মার্ক লোকক কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে তার সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। তিনি উদ্বাস্তু ক্যাম্পসমূহে জাতিসংঘ ও এর সহযোগী সংস্থাগুলো নেয়া বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত ও অন্যন্য সহায়তার সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন।

আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল রোহিঙ্গাদের জন্য জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা, ভবিষ্যত পরিকল্পনা, এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে পাওয়া সহায়তার কথা সদস্যরাষ্ট্রসমূহকে অবহিত করেন। তিনি বলেন, আগামী ২৩ অক্টোবর জেনেভাতে অনুষ্ঠেয় দাতা সম্মেলনে জাতিসংঘের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহায়তার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানানো হবে।

মার্ক লোকক জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদেরকে উদারভাবে আশ্রয় ও মানবিক সহায়তা দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকার ও জনগণকে ধন্যবাদ জানান।

স্পিকার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসা নির্যাতনের শিকার জনগোষ্ঠীর অমানবিক অবস্থার বর্ণনা দেন। তিনি জাতিসংঘ সহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী ও কার্যকর সমাধানে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান। স্পিকার বলেন, ‘আমরা এই সমস্যার জরুরি সমাধান চাই, যাতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী নিরাপদে এবং মর্যাদার সাথে তাদের ঘরে ফিরতে পারে। এই সঙ্কটের শিকড় মিয়ানমারে এবং এর সমাধানও মিয়ানমারেই নিহিত। রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে এ সমস্যা সমাধান সম্ভব।

স্পিকারের আজ জাতিসংঘ মহাসচিব ও ইউএন উইমেনের নির্বাহী পরিচালকের সাথে সাক্ষাত করবেন।